কম্পিউটার কেনার মতো সামর্থ্য নেই টাইপরাইটার সাবিনার
টাইপরাইটার সাবিনা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
‘কম্পিউটার আসায় এখন ‘টাইপরাইটারে (ম্যানুয়াল) তেমন কাজ হয় না। দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কাজ করা যায়। কলেজে পড়ুয়া এক মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি মেয়েকে ঠিক মত পড়াশোনার খরচ দিতে পারি না কলেজের শিক্ষকদের সহযোগিতায় চলছে। একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার কেনার মতো সামর্থ্য নাই। আজ যদি একটি কম্পিউটার থাকতো তবুও মা মেয়ে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে পারবো।’ এভাবেই ঢাকাপ্রকাশকে কথাগুলি বলছিলেন, টাইপরাইটার (ম্যানুয়াল) সাবিনা ইয়াসমিন।
সাবিনা ইয়াসমিন। বাড়ি নওগাঁ শহরের বাইপাস ব্রীজ এলাকায়। একযুগ ধরে নওগাঁ জর্জকোর্টের সামনে টাইপিস্টের (ম্যানুয়াল) কাজ করে জীবন পার করছেন। টাইপরাইটিংয়ের কাজ করেই এক মেয়েকে নওগাঁ সরকারি কলেজে পড়াশোনা করাচ্ছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন বিয়ে করেছিলেন ২০০৬ সালে। স্বামীর সঙ্গে দুই বছর পর ডিভোর্স হয়ে যায়। সদ্য নবজাতক মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয়। এক আত্মীয়র সহযোগিতায় ১০ হাজার টাকায় একটি টাইপ মেশিন কিনে ২০০৯ সাল থেকে জজ কোর্ট চত্তরে এ পেশায় তিনি।
রবিবার (১০ মার্চ) দুপুরে নওগাঁ জজ কোর্টের পাশে জেলা এ্যাডভোকেট বার এ্যাসোসিয়েশন অফিস চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাশাপাশি ৪ টি টাইপরাইটার বা টাইপ মেশিন রয়েছে। যার মধ্যে ৩টিই কম্পিউটার । এর মধ্যে একজন নারী টাইপিস্টের সঙ্গে দেখা হয়। পাশের তিনজন বিভিন্ন কাগজপত্র টাইপ করছেন। বাকি যে একটি রয়েছে টাইপিস্ট (ম্যানুয়াল) কাজের অভাবে ফাঁকা পড়ে আছে।
সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘কোট চত্তরে তখন ১৮ জন টাইপিস্ট ছিল এখানে। দলিল, হলফনামা, চুক্তিনামা, দরখাস্ত, দানপত্র ইত্যাদি কাজের সবই আমরা করতাম। এক পাতা করতে ৫ থেকে ৭ টাকা নিতাম। দিনে ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম ছিল।'
তিনি বলেন, ‘সবাই কাজ করেন কম্পিউটারে শুধু তিনি একমাত্র নারী টাইপরাইটার (ম্যানুয়াল) কাজ করেন। এখন চাহিদা নেই বললেই চলে। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের সব দায়িত্ব তার কাঁধে। যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে চলা খুবই কষ্টকর। একটি কম্পিউটার কেনার মতো সামর্থ্য নাই। তারপরও অনেকে আসেন টাইপ করানোর জন্য। একসময়ে এই পেশায় তাদের ভালো উপার্জন হলেও বর্তমানে কম্পিউটারে অধিকাংশ কাজ হওয়ায় উপার্জন কমে গেছে। তবে কম্পিউটারের কম্পোজের প্রতিযোগিতায় এখন টাইপ মেশিনের লেখায় ২ থেকে ৩ শত টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।’
এ প্রসঙ্গে কথা হলে নওগাঁ জেলা টাইপ কল্যান সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি বলেন, ‘আগের মতো চাহিদা না থাকায় হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত বাকিরা পেশা বদলাচ্ছেন। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না পাওয়ায় টাইপরাইটার পেশা এক সময় হারিয়ে যাবে বলেও শঙ্কা করেন তিনি। পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো জাদুঘর আর ইতিহাসের পাতা থেকেই ধারণা লাভ করবে এই পেশা সম্পর্কে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে টাইপরাইটারের যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় না। বাজার থেকে হারিয়ে গেছে। যার কারণে টাইপ মেশিন চালানো এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।’