ভালোবাসা দিবসে ১৫ টাকার গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়
ছবি সংগৃহিত
ভালোবাসা দিবসে সবাই প্রিয়জনকে দিতে চায় তাজা গোলাপ, বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে খোপায় বাধে গাঁদা ফুল। আর সরসতী পূজায় পলাশ ফুল তো লাগবেই। সবমিলিয়ে কদর বেড়েছে ফুলের রানি গোলাপসহ অন্যদের। এবছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও সরস্বতী পূজা একইদিনে হওয়ায় ফুলের চাহিদা বেশি থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এরপর আবার সপ্তাহ বাদে আসছে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
প্রতিবছরের মতো এবছরও এসব উপলক্ষ কে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে ফুলের বাজার। ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে বেড়েছে গোলাপ ফুলের কেনাবেচা। পাইকারি বাজার থেকে ফুল ক্রয় করে নিয়ে এসেছেন খুচরো ফুল বিক্রেতারা। এসব ফুলের মধ্যে রয়েছে– গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রথস্টিক, জিপসি, গ্যালেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, বোথাম ইত্যাদি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। এই ভিড় সামলাতে দোকানের সামনে অস্থায়ী স্টল খুলে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কোনও দোকানে তিন জন, কোনোটায় ছয় জন পর্যন্ত কর্মচারী রয়েছেন।
এসব দোকানে তিন ধরনের গোলাপ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে একটি দেশি, বাকি দুটি চায়না ৷ চায়না হলুদ গোলাপ চার দিন আগে বিক্রি হতো ১০-১৫ টাকা, এখন তা ১০০-১১০ টাকা। চায়না সাদা গোলাপ বিক্রি হতো ২০ টাকা, এখন তা ৯০ টাকা। দেশি গোলাপ আগে ছিল ১০-১৫ টাকা, এখন ৬০-৭০ টাকা।
সাধারণত ৩০০টি গোলাপের প্রতিটি বান্ডিল বিক্রি হয় আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকায়। তবে ভালোবাসা দিবসে এই বান্ডিল বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। ফুলের দোকানি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ভালো মানের গোলাপ ফুল এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে চাহিদা ও সুযোগ বুঝে প্রতিপিস গোলাপ ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন ফুল বিক্রেতারা। এ ছাড়া রজনীগন্ধার স্টিক মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা, প্রতিটি গাঁদার মালা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, জারবেরা ফুল ৩০ থেকে ৫০ টাকা, অর্কিড স্টিক ৪০-৬০ টাকা, গ্লাডিওলাস রংভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তিন উৎসব একদিনে হওয়ায় প্রত্যেক দোকানিরা প্রায় লাখ টাকার বেশি ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। এ মাসের ১৪ তারিখ এবং ২১ তারিখ সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়। ১৪ তারিখে গোলাপ আর ২১ তারিখে গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয়। এসব দিনে ফুলের দোকানগুলোতে অনেকে বাড়তি কর্মচারী ও কারিগর রাখেন।
শাহবাগে ফুলের বাজার রয়েছে দুটি। একটি খুচরা বাজার, অপরটি পাইকারি। পাইকারি বাজারের কার্যক্রম শুরু হয় রাত ৩টায়, যা চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। রাতভর ট্রাক-পিকআপে করে ঢাকার আশপাশ ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখানে বিভিন্ন ফুল আনা হয়। সাধারণত যশোর, বেনাপোল, ফরিদপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে ফুল আসে। পরে এখান থেকেই ঢাকার অন্য খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা ফুল সংগ্রহ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব ফুলের মধ্যে রয়েছে– গাঁদা, রজনিগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রথস্টিক, জিপসি, গ্যালেনডোলা ও চন্দ্রমল্লিকা। যশোর ও ঝিনাইদহ থেকে চাষিরা এসব ফুল নিয়ে আসেন। সাভার, মানিকগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার চাষিরাও গোলাপ, রজনিগন্ধা, ছোট-বড় গাঁদা ফুল নিয়ে আসেন।
শাহবাগে ৫০টির মতো খুচরা ফুলের দোকান রয়েছে। ক্রেতারা এই বাজার থেকে ফুল সংগ্রহ করেন।
ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি বাবুল প্রসাদ বলেন, সারা বছর তো এখানে পাইকারি দামে ফুল বিক্রি হয়। ধরেন, প্রতিদিন এখানে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। আর ১৪ ও ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি পাইকারিতে ফুল বিক্রি হবে। আর খুচরা বাজার তো আছেই। যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রংপুরসহ মোট ২৪টি জেলা থেকে এখানে ফুল আসে।
যা বলছেন ক্রেতারা
অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ, ফুলের দাম বাড়তি। রোহান আহমেদ নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। সেজন্য ব্যবসায়ীরাও দাম বেশি চাইছেন। কিন্তু এটি ঠিক নয়। তারা সাধারণ মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন।
ফুলের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা উচিত উল্লেখ করে নাহিদ হাসান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা বাড়ে। এটি ফুল উৎপাদনেরও সময়। বাজারে ফুলের কোনো ঘাটতি নেই। সেজন্য বিষয়গুলো তদারকি করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা যা খুশি দাম নিচ্ছেন। তাই অতিরিক্ত দাম ঠেকাতে যথাযথ তদারকি প্রয়োজন।
গোলাপ ফুল কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, কিছুদিন আগে যে গোলাপ ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে কিনেছি সেই গোলাপ আজ ১০০ টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এছাড়া ছোট সাইজেরগুলো ৫০ থেকে ৭০ টাকা দাম চাচ্ছে। শুধু একদিনের জন্য গোলাপ ফুলের দাম বেড়ে যাওয়াটা অযৌক্তিক।