র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪০) মৃত্যুর ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত দল সুলতানা জেসমিনের ছেলে, ভাই ও মামা, বাড়িওয়ালা এবং দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে।
সোমবার (২৯ মে) বেলা ৩টা থেকে নওগাঁ সার্কিট হাউসে তদন্ত দলের সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।
তদন্ত দলের সঙ্গে কথা বলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমুল হক। তদন্ত দলের আমন্ত্রণে আসা অন্যদের তখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।
নাজমুল হক বলেন, ‘গত ২২ মার্চ নওগাঁর মুক্তির মোড় থেকে জেসমিনকে র্যাব সদস্যরা আটকের পর নওগাঁ হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন কী ঘটেছে তার বর্ণনা আমাদের কাছ থেকে শুনেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে আশা করছি, তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ন্যায়বিচার পাব বলে আমরা আশাবাদী।’
সুলতানার বাড়িওয়ালা দুলাল হোসেন বলেন, ‘তদন্ত দলের সদস্যরা যা যা জিজ্ঞেস করেছেন তার জবাব দিয়েছি। জেসমিন আমার বাড়িতে ৬-৭ বছর ধরে ছিল। এই সময়ের মধ্যে কখনো তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি। অন্য প্রতিবেশীরাও তাকে ভালো মানুষ হিসেবে জানত। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তার প্রতি অন্যায় হয়েছে তা বের হয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।’
তদন্ত দলের সদস্যদের মধ্যে নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আবু শামীম আজাদ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইমতিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম, সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান সার্কিট হাউসে ঢুকতে দেখা যায়।
হাইকোর্টের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে। কমিটি সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ সকালে র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র্যাব এ অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার (এনামুল) ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আটকের পরের দিন ২৪ মার্চ সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকাল। জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী আল-আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল-আমিনকে গত ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।
এসজি