ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হাওরের অধিকাংশ কৃষক
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে ৯৬ শতাংশের বেশি ধান কেটে ঘরে তুললেও হাসি নেই চাষিদের মুখে। যদিও কৃষকের কথা বিবেচনা করে সরকার ধানের দাম বাড়িয়েছে। মণ প্রতি ১ হাজার দুই'শ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে পুরোদমে ধান কেনায় দেরি হওয়ায় নগদ টাকার প্রয়োজনে কৃষকরা বাধ্য হয়েই কম মূল্যে খোলা বাজারে ফরিয়াদের কাছে ধান বিক্রি করছেন।
এদিকে সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে ৭ এপ্রিল। তবে জেলায় পুরোদমে ধান কেনা শুরু করা যায়নি। সুনামগঞ্জে গত বছর সরকারিভাবে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার টন। চলতি বছর তা কমে ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সুনামগঞ্জে এবার প্রায় পৌনে ৪ লাখ কৃষক ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদন করেছেন। ধানের এই বাম্পার ফলনেও ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক। সরকার ধানের দাম প্রতিমণ ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করলেও জেলার কোথাও এক হাজার টাকার বেশি ধান বিক্রি হচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গুয়ারচুরা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালিক বলেন, ‘সরকারিভাবে ধান কিনার জন্য আমরার এদিকে কেউ আইছে না খোঁজ খবর নিছে না। আমি প্রায় ১০ কেয়ার জমিতে ধান চাষ করছি টাকা ঋণ আইন্না। এখন ঋণের টাকা আর শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে হচ্ছে ফরিয়াদের কাছে ধানের মণ ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় করে বিক্রি হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হাওড়পারের কৃষক মো. হাসান তালুকদার বলেন, ‘আমি এবার ছয় একর জমিতে বোরো ধান করেছি, কয়েক বছর পর এবারই আমার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু সরকার মণ প্রতি ধানের মূল্য নির্ধারণ করছে ১২শ টাকার বেশি কিন্তু এই ধামে আমি বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের এইদিকে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০- ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। পরিবারের ব্যয় মেটাতে বাধ্য হয়েই কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কৃষক যেন তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান, সেটি সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য হাওরের বোরো ও আমন ফসল বাজারজাত-ব্যবস্থা আরও উন্নত করা দরকার। এ ছাড়া কৃষক যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে ধান ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন ও খোলা বাজারের ফরিয়া ও দালালদের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন হাওরবাসী।
ধান কিনতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম ভূঞা বলেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে ৭ তারিখ থেকে প্রস্তুত, তবে কিছু কাজ বাকি ছিল, যেমন ধরেন অনলাইনে আবেদন, আবেদনের পরে আমাদের লটারি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধান ক্রয় করব। কিন্তু এই কার্যক্রর্ম গুলো একদম ক্লিয়ার, এখন কৃষকের জন্য উম্মুখ হয়ে আছি।
এই কর্মকর্তা আরও জানান অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বরাদ্দ কম আসছে, গত বছর ছিল ২৮ হাজার টন, এবার আসছে ১৭ হাজার টন।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ সোম বলেন, সুনামগঞ্জে কৃষক পরিবার রয়েছে চার লাখ, প্রকৃত কৃষকেরাই যাতে সরকারিভাবে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন সেভাবেই আমরা খাদ্য বিভাগের কাছে তালিকা করে পাঠিয়েছি। হাওরের প্রকৃত কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাবেন বলেন আমার বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন জেলার কোনো কৃষক হয়রানি হলে আমরা তাদের পাশে আছি। আমাদের সকল অফিসারদের বলা আছে একজনও কৃষক যেন হয়রানি শিকার না হন।
আরএ/