ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে তলিয়ে যেতে পারে সেন্টমার্টিন
ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে তলিয়ে যেতে পারে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এমন আশঙ্কা করছেন জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তার মতে, বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। তাই এই প্রবাল দ্বীপ থেকে মানুষদের দ্রুত সরিয়ে নিতে জোর অনুরোধ জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক। ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে দ্বীপের প্রায় ১২ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে আড়াই হাজার মানুষকে টেকনাফে সরিয়ে নিয়েছে সরকার।
বাকি ৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে ৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ দ্বীপের ৩৭টি হোটেল রিসোর্ট-কটেজ খালি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৩ মে) বিকাল ৩টায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল রান থেকে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় মোখার স্থলভাগ আঘাতের স্থান পর্যালোচনা করে বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে জলবায়ু গবেষক পলাশ তার ফেসবুক প্রোফাইলে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা পুরো কক্সবাজার জেলার উপর দিয়েই অতিক্রম করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।
তিনি বলেন, মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-অবকাঠামোর বড় ক্ষতি হবে। এতে মানুষের প্রাণহানি হবে। কমপক্ষে দ্বিতীয় বা তার উপরের তলার ভবনে আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে বড় প্রাণহানির শঙ্কা আছে।
এদিকে গতকাল সকাল ৯টা থেকে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণপাড়া ও হলবনিয়া গ্রাম থেকে লোকজনকে সরানো কাজ শুরু হয়েছে। সঙ্গে আগেভাগে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য এলাকায় চালানো হচ্ছে প্রচারণা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, শনিবার সকাল থেকে গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি, তবে ঝড়-বৃষ্টি নেই। সাগর উত্তাল রয়েছে। দ্বীপের মাছ ধরার তিন শতাধিক ট্রলার আগেভাগে টেকনাফের খায়ূকখালী খাল ও শাহপরীর দ্বীপে পাঠানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরে দ্বীপের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে আগেভাগে পরিবার নিয়ে টেকনাফে চলে গেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে দ্বীপের অধিকাংশ ঘরবাড়ি বিলীন হতে পারে। কারণ দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষের ঘরবাড়ি ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত, বাঁশ ও পলিথিনের বেড়ার।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট কেফায়েত উল্লাহ খান জানান, ইতিমধ্যেই সাগরের পানির উচ্চতা সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থলভাগের সাথে সমান হয়ে গেছে। এখানে জোয়ার ভাটার কোন তারতম্য নেই। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তারা সাইক্লোন সেন্টার ও স্কুল মাদ্রাসাসহ হোটেলগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যেকোনো দুর্ঘটনা এড়িয়ে মানুষকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এসআইএইচ