শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ, খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম নগরীর আশপাশের উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া। উপজেলা ও নগরীর হাসপাতালগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ২০০ করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন আবার অনেকে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। নগরীর পর সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলায়। এ ছাড়াও জেলার সব উপজেলায় ডায়রিয়া রোগী আছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই ডায়রিয়া রোগী। এরইমধ্যে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে চট্টগ্রামে এসেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের একটি দল। তারা এখনো চট্টগ্রামে অবস্থান করছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ইলিয়াছ হোসেন বলেন,ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন উপজেলায় তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রামে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। আইইডিসিআর একটি টিম পাঠিয়েছে কারণ উদঘাটনে। আমরা আশা করছি সহসা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসা সরবরাহ করছে লবণাক্ত পানি। এজন্য ওয়াসার পানিকেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার পেছনে মূল কারণ হিসাবে মনে করছেন নগরবাসী। তবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়া নিয়ে চিকিৎসক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। কারো মতে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। আবার অনেকের মতে চট্টগ্রাম ওয়াসার লবণাক্ত পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে প্রচুর ডায়রিয়া রোগী।

এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম শহরের কাছের ৪ উপজেলার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে অন্তত ৪ শতাধিক রোগী। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে এই সংখ্যা ২৯১ জন।

চিকিৎসকরা বলছেন, পানিবাহিত এই রোগ গ্রীষ্ম মৌসুমে কিছুটা বাড়ে। তবে এবার অনেক বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। গরমে অতিষ্ঠ অনেকে বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে মনে করছেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রমজানের আগে থেকেই লবণাক্ত পানি সরবরাহ করছে। এসব পানি পান করে লোকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর যেসব এলাকায় লবণাক্ত পানি সরবরাহ হচ্ছে সেখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীও বেশি। তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বরাবরের মতো দাবি করেছেন, ওয়াসার পানিতে কিছুটা লবণাক্ততা আছে। তবে তা খুবই সহনীয় মাত্রায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মতো লবণাক্ত নয়। তাছাড়া বৃষ্টিপাত শুরু হলে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ একেবারেই কমে যাবে। এরপর পানি নিয়ে উৎকণ্ঠার কিছু থাকবে না।

জানা গেছে, নগরীর বন্দর, হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, খাজা রোড, মোহরা, ষোলশহর এলাকায় ডায়রিয়া রোগী বেশি। নগরীর এসব এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানির লবণাক্ততা বেশি। এসব এলাকার সামর্থ্যবানরা ওয়াসার পানি বাদ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জারের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানি কিনে পান করছেন। আর এই সুযোগে অসাধুরা প্রতি জার ৪০ টাকার স্থলে এখন ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, জারের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিও দূষিত। নগরবাসী যাচাই না করেই কিনে নিচ্ছেন। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বেসরকারি মা শিশু হাসপাতালে প্রচুর রোগী ভর্তি আছে। নগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালে শিশু ডায়রিয়া ইউনিট রোগীদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ। আক্রান্তদের বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্ক।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম বলেন, গরমের মৌসুম শুরুর পর থেকে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খোলা ও বাসী খাবার খাওয়া যাবে না। সচেতনতা বাড়লে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা মিলবে। এদিকে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব সতর্কতায় কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর স্বাক্ষরে এসব নির্দেশনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি উপজেলায় ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জনস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রদত্ত নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ রাখতে হবে। ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

এদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের একটি দল। রবিবার (৭ মে) রাতে দলটি চট্টগ্রামে পৌঁছায়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম চট্টগ্রামে এসেছে। তারা এখনো চট্টগ্রামে অবস্থান করছে। টিমের সদস্যরা ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ খুঁজতে আজ থেকে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৫ মে চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আইইডিসিআরকে চিঠি দেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন। চিঠিতে চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। পরে গত ৬ মে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১২ সদস্যের একটি দল গঠন করে চট্টগ্রামে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ দেন। সেই টিমের সদস্যরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।

এসআইএইচ 

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত