সিসিকের ‘উন্নয়ন দুর্ভোগ’, নগরের ড্রেনে ভাসে ময়লার স্তুপ

দোকানের সামনের রাস্তা থেকে ময়লা-আবর্জনা সরাচ্ছিলেন শফিক মিয়া। আধ ঘণ্টার বৃষ্টিতে পাশের ড্রেন থেকে ভেসে আসছিল ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। এসব ময়লা থেকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধের কারণে শফিক মিয়ার দোকানের নিয়মিত ক্রেতারা আসতে চাইছেন না দোকানে! অগত্যা একটি লোহা জাতীয় বস্তু দিয়ে তিনি ভেসে আসা ময়লাগুলো সরিয়ে দিতে চেষ্টা করেন।
শফিক মিয়ার দোকান নগরীর নাইওরপুলে। শুধু শফিক মিয়াই নন, এমন দুর্ভোগের শিকার তালতলা এলাকার টায়ার ব্যবসায়ী কুতুব উদ্দিনও। একই অভিযোগ ধোপাদীঘির পাড়স্থ ব্যবসায়ী শওকত আলীর। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কালিঘাট, ছড়ারপাড় ও মাছিমপুর এলাকার লোকজন। জলাবদ্ধতাসহ ড্রেনের আবর্জনার চিত্র এই এলাকার নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে নগরবাসী ফের বন্যার কবলে আক্রান্ত হতে পারেন।
বৃহস্পতিবার নগরীর লামাবাজার ভাতালিয়া গলির নোয়াপাড়া মসজিদের পূবে সড়কের পাশে দেখা যায় খোলা ড্রেনে আবর্জনা জমে পানিপ্রবাহ বন্ধের উপক্রম। বদ্ধ পানি থেকে ছড়াচ্ছে বিকট দুর্গন্ধ।
এই দুর্ভোগ লাঘবে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও টানা দুইবারে নগর পিতা নগরবাসীর এই দুর্ভোগ সমাধান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। বর্ষা যখন কড়া নাড়ছে দরোজায়, ঠিক সেই সময়টাতে বরাবরের মতো শঙ্কায় নগরবাসী। মাত্র কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে নালা-ছড়া উপচে রাস্তায় পানি উঠে আসে। এর সাথে আসে ময়লা আবর্জনা। বৃষ্টি থামলে পানি নেমে গেলেও বিভিন্ন বাসাবাড়ির উঠোন ও রাস্তায় পড়ে থাকে ড্রেন থেকে উঠে আসা ময়লা-কাদা ও বিভিন্ন আবর্জনা। এসব আবর্জনায় আশপাশ নোংরা হওয়ার পাশাপাশি ছড়ায় দুর্গন্ধ। ড্রেনে ময়লার স্তুপের কারণ পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে বর্ষায় ভয়ানক দুর্ভোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঠিকমতো নালা, ছড়া, ড্রেন পরিষ্কার না করায় এমন হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। তারা অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন দায়সারাভাবে মাঝে মধ্যে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ করে। তা ছাড়া যখন পরিষ্কার করে তখন ড্রেন থেকে তোলা আবর্জনা ড্রেনের পাশেই কয়েকদিন ফেলে রাখে। এতে মানুষের পায়ে লেগে কিংবা বাতাসে তার বেশিরভাগ আবার ড্রেনেই চলে যায়। তা ছাড়া কুকুর এসব আবর্জনা নাড়াচাড়া করায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এর সঙ্গে ছড়াচ্ছে নানান রোগবালাই। পানিবন্দির বিড়ম্বনা তো থাকছেই।
সরেজমিনে নগরীর লামাবাজার, ভাতালিয়া, নোয়াপাড়া, দাড়িয়াপাড়া, জল্লারপাড়ায় দেখা গেছে প্রতিটি এলাকায় ড্রেনে ময়লার স্তুপ। বড়ো বড়ো ড্রেনগুলোর মুখে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে আছে আর ছোট ছোট ড্রেনগুলো পুরোটাই ময়লা-আবর্জনায় ঢেকে আছে। এলাকাবাসী জানান, মাঝে মধ্যে সিটি করপোরেশন থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ড্রেন পরিষ্কার করেন। তারা রাস্তার পাশের সামনের দিকে পরিষ্কার করলেও ভেতরের দিকে হাত দেন না। এতে আসলে তারা দায় সারছেন কিন্তু নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না।
বৃষ্টির পানিতে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিঃসন্দেহে বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। তবে এই ঘটনার জন্য শুধু মেয়রকে এককভাবে দায়ী করা যুক্তিযুক্ত নয়। এমন সমস্যা নগরীর সবকটি ওয়ার্ডে বিদ্যমান।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিজ নিজ ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজেদের ডিমান্ড জানালে মেয়র মহোদয়ের জন্য কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হতো। তবে তিনি নগরবাসীকেও এ ব্যাপারে সচেতন থাকার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ময়লা-আবর্জনা নির্ধারিত স্থানে না ফেলে রাস্তার ফেলে রাখার কারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সিলেট জেলা সাবেক আহ্বায়ক মুকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ড্রেন ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে ড্রেন উপচে পানি আর ময়লা রাস্তায় চলে আসে। বৃষ্টি হলেই আমরা আতঙ্কে থাকি কখন পানি এসে বাসায় ঢুকে। পানির চেয়ে আরও বেশি সমস্যা পানি নেমে যাওয়ার পর ময়লা কাদা আর আবর্জনার বিড়ম্বনা। পানি নেমে গেলেও এগুলো তো আর নামে না। তাই এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া জরুরি। এতে মানুষের দুর্ভোগ যেমন বাড়ছে তেমনি নগর কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভও বাড়ছে।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ই ইউ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘এরই নাম অপরিকল্পিত উন্নয়ন। যে খাতে টাকার অপচয় এবং লুটপাট চলবে কিন্তু কমবে না দুর্ভোগ। এর ফলে নগরীর ১১টি ছড়া ও খাল উদ্ধার, ড্রেনেজ সংস্কারের নামে সরকারি বরাদ্দ এলেও শঙ্কা কমছে না নগরবাসীর।
নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুমিন বলেন, কিছু ড্রেনের সংস্কার কাজ এখনো চলমান। ময়লা আবর্জনার বিষয়টি স্বীকার করলেও তিনি বলেন, এখন আর ছড়ারপাড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় না। তবে চলমান কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা এবং ড্রেনেজ সমস্যা থেকে ওয়ার্ডবাসী পরিত্রাণ পাবে।
সিসিকের প্রধান নিবার্হী বদরুল হক বলেন, ময়লা-আবর্জনা নির্ধারিত স্থানে ফেলে না দিয়ে অনেকেই ড্রেনের মধ্যে ফেলেন। এর ফলে সিসিকের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্বে থাকা লোকজন প্রতিদিন কাজ করলেও ড্রেনগুলো ফের ময়লায় ভরে যায়। তিনি বলেন, নগরবাসী সচেতন হলেই এবং নির্ধারিত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেই জলাবদ্ধতা এবং ময়লা আবর্জনাজনিত সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এসএন
