নেত্রকোনায় হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ
নানা প্রতিকূলতা ও শঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত নেত্রকোনার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বৈশাখী উৎসবের আমেজে সোনালী ধান ঘরে তুলেছেন হাওরাঞ্চলের কৃষক। ইতোমধ্যে হাওর এলাকার ৯০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে হার্ভেস্টার মেশিন ব্যবহারে ফসল ঘরে তুলতে পেরে খুশি হাওরবাসী। তবে সঠিক দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সপ্তাহব্যাপী একটানা গরমকে উপেক্ষা করে নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিায়াজুরীসহ বিভিন্ন হাওরে রাত-দিন চলছে ধান কাটা ও মাড়াই। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণী। হাওরগুলোতে সরকারের ভর্তুকি মূল্যে ৭৩০টি হারভেস্টার মেশিন দিয়েছে। এজন্য সিংহভাগ ফসল ঘরে তুলতে পেরেছে কৃষক। এতে একদিকে যেমন স্বল্প সময়ে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে তেমনি শ্রমিক সংকটও অনেকটাই নিরসন হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, এ বছর অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ে চাষাবাদ করতে হয়েছে একমাত্র ফসল। কিন্তু শিলাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত গরমে নষ্ট হয়েছে আগাম জাতের ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অসংখ্য চাষি। যদিও অন্যান্য জাতের ধানে বাম্পার ফলন হওয়ায় ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মাঠে নেমেছেন তারা। শুধু ধান সংগ্রহ নয় পাশাপাশি চলছে গো-খাদ্য শুকিয়ে সংরক্ষণের কাজ।
খালিয়াজুরীর পাঁচহাট গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, হাওরে এখন ধানকাটা প্রায় শেষের দিকে। প্রান্তিক কৃষকরা মহাজনসহ বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে ফসল ফলান। ঋণ পরিশোধের জন্য তারা দ্রুত ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। এলাকার বাজারে এখন প্রতি মণ ধান সর্ব্বোচ ৮০০ টাকা থেকে ৮৬৫ টাকা। এই দরে ধান বিক্রি করলে কৃষকের লোকসান হবে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে জেলার হাওরাঞ্চলে ধান কাটা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়েছেন নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান।
তিনি বলেন, জেলায় এ বছর এক লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ১১ লাখ ৫৬ হাজার ১৬২ টন ধান উৎপাদন হবে। শুধুমাত্র হাওরেই আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার হেক্টর জমি। যেখানে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৯৯২ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
এখন বৃষ্টি বা আগাম বন্যা ফসলের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা কমে গেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাওর পাড়ের চাষিরা।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, এ বছর বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা ঘরে ফসল তুলতে পেরেছে। জেলা কৃষি বিভাগকে বলা হয়েছে দ্রুত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে জমা দেওয়ার জন্য। তালিকা পেলে দ্রুত ধান কেনা শুরু হবে।
আরএ/