নেত্রকোনায় তীব্র তাপদাহ ও অব্যাহত লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
নেত্রকোনায় সপ্তাহব্যাপী গ্রীষ্মের এক টানা তীব্র তাপদাহ ও বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাপদাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ । এতে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪০ মেঘাওয়াট। এর মধ্যে পিডিবির চাহিদা ২০ মেঘাওয়াট, পাওয়া যাচ্ছে ১৪ মেঘাওয়াট আর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ১২০ মেঘাওয়াট, পাওয়া যাচ্ছে ৬৫ মেঘাওয়াট। সরকার চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ও পবিত্র মাহে রমজান মাসে সর্বত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস দিলেও হঠাৎ সপ্তাহব্যাপী বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সাতপাই এলাকায় রিকশাচালক জমির উদ্দিন জানান, প্রচণ্ড গরমে যাত্রী নিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে তিনি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে রোজা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তীব্র গরমেও জমির উদ্দিনকে রিকশা চালিয়ে পরিবারের খাবার সরবরাহ করতে হচ্ছে। কোনো প্রকার সরকারি ভাতাও তিনি পাচ্ছে না। পড়ালেখা না জানার কারণে কোথায় কার কাছে যেতে হবে তাও জানেন না তিনি।
মোক্তারপাড়া নিবাসী সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন বলেন, পবিত্র রমজান মাসে সেহেরি, ইফতার ও তারাবির নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় রোজাদাররা খুব কষ্ট পাচ্ছেন। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় তারাবির নামাজ পড়তে কষ্ট হয়। অপরদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সেহেরির খাবার তৈরি করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গৃহিনীরা। এর প্রভাব পড়ছে রোজাদারদের উপর।
মদন উপজেলা শহরের ওষুধ ব্যবসায়ী সাধন সরকার বলেন, প্রতিদিন ডায়রিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীরা আসছে দলে দলে। হঠাৎ একটানা অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বাসা-বাড়িতে টিকা দায় হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও সুরাহা হচ্ছে না।
মোহনগঞ্জ উপজেলার শিয়াধার গ্রামের কৃষক রুবেল, রিপন মিয়া জানান, আমরার এলাকায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় একদিকে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে অপরদিকে এই গরমে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়ছে। অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবার ভয়ে আগাম হাওরের ফসল কাটা হচ্ছে। গরমে সারাদিন খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরে শান্তিতে রাতে ঘুমানো সম্ভব হচ্ছে না।
নেত্রকোনা জেলা শহরের ছোট বাজারের ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন সরকার, দিলীপ সরকার, তপন কর্মকার, স্বদেশ জানান, আশা করেছিলাম এই ঈদে ভালো বেচা-কেনা হবে। কিন্তু বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে তেমন বেচা-কেনা হচ্ছে না। রাতে প্রচণ্ড গরমে ঘুমানো সম্ভব হচ্ছে না। দর্জি ও জুয়েলারি দোকানে ক্রেতাদের ঈদের অর্ডার রাখার পরও পোশাক ও অলংকার সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
এদিকে জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এক্সরে ও বিভিন্ন পরীক্ষা বাইরের ক্লিনিক থেকে করে আনতে হচ্ছে অধিক মূল্যে। এতে করে ক্ষতিগ্ৰস্ত হচ্ছে সাধারণ আয়ের রোগীরা।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী জানান, গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র তাপদাহে এবং পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের সরবরাহ কম হওয়ায় মাঝে মাঝে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
এসআইএইচ