সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধে চরম ভোগান্তিতে ২০ গ্রামের মানুষ
নেত্রকোনার আটপাড়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে পাহাড়পুর বাজার সংলগ্ন মগড়া নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে পারাপারে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নদীর দুই পাড়ের ২০ গ্রামের মানুষ। অতি দ্রুত অসমাপ্ত সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি এলাকাবাসীর।
গত দুই বছর আগে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে যায় সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তালুকদার নির্মাণের স্বত্বাধিকারী সেলিম তালুকদার। খবর নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদকালও শেষ হয়ে গেছে। সেতুর নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে আশেপাশের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পাহাড়পুর-মঙ্গলসিধ সড়কের পাহাড়পুর বাজার সংলগ্ন মগড়া নদীর উপর সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির ৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৮ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে। পরের বছর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘তালুকদার নির্মাণ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানকে কাজের মেয়াদকাল এক বছর ধরে দেওয়া হয়। অথচ নির্ধারিত সময়ের ২ বছরের বেশি সময় চলে গেলেও সেতুর নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। সব মিলিয়ে সেতুর কয়েকটি পিলারসহ কাজ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।
সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার মানুষের ভোগান্তি চরমে। বর্ষাকালে নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে নদী পার হতে হয় পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কামতলা, স্বরমুশিয়া, সুনই, আটিকান্দা, পোখলগাঁও, মোবারকপুর, বানিয়াজান, ছয়াশিসহ প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নদীর দুই পাশের পিলারসহ নদীর মধ্যে দুই জায়গায় দুটি করে মোট চারটি পিলার নির্মাণ করা আছে। তাতে বেরিয়ে আছে রড। সেখানে ঠিকাদারের লোকজন বা কোনো শ্রমিক নেই। সেতু সংলগ্ন পাহাড়পুর বাজারের ব্যবসায়ীসহ শতাধিক লোকজন সাংবাদিকের কাছে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে জড়ো হন। এ সময় সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় বিষ্ণুপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী রাহুল খান, স্বরমুশিয়া গ্রামের দিনমজুর রতন মিয়া, আটিকান্দার ঝন্টু মন্ডল, পাহাড়পুরের ইদ্রিস মিয়া, বাজারের মুদি দোকানদার আরিফ মিয়া, শেরেকুলসহ অন্তত ২৫ জন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার চলে গেছেন। এরপর থেকে আর কেউ এসে খোঁজ নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তালুকদার নির্মাণের স্বত্বাধিকারী সেলিম তালুকদার বলেন, ‘সেতুর কাজটি আমি নিজে করিনি। আমার লাইসেন্স দিয়ে কেন্দুয়ার দীপক ব্যানার্জি ও আলয় বাবু নামের দুইজন ব্যক্তি টেন্ডার নিয়েছিলেন। শুরুতে কাজের গতি ভালো ছিল। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় এখন কাজ বন্ধ আছে। কাজের সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। বর্ষা শেষ হলে আবার কাজ শুরু করা হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম শেখের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। আটপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আল মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘মগড়া সেতুর কাজটি নিয়ে ঠিকাদার খুবই ভোগাচ্ছে। একাধিকবার সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’
এসআইএইচ