দুস্থদের ভিজিডি চালে সচ্ছলদের থাবা!
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচির চাল প্রকৃত দুস্থদের পাওয়ার কথা থাকলেও তাতে থাবা দিচ্ছে সচ্ছল ও চাকরিজীবীরা।
বরগুনা তালতলীর বড় বগী ইউনিয়নে চাল বরাদ্দের নাম তালিকায় এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের ছোট ভাইজোড়া গ্রামের বাসিন্দা খাদিজা বেগম।
ইউএনও’র কাছে দায়ের করা অভিযোগে নিজেকেই দুস্থ দাবি করেছেন খাদিজা। তার ৩টি সন্তান ও আয় রোজগারের কোনো মাধ্যম নেই। তার নামে ভিজিডিও নেই।
খাদিজা বেগমের দাবি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভিজিডি কার্ডের জন্য বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদে অনলাইনে আবেদনের পর যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত যে তালিকা করা হয়েছে তাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
এই অভিযোগের পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বড়বগীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও স্থানীয় মেনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহ নেওয়াজ সেলিমের স্ত্রী সালমা বেগম ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভিজিডি কার্ড পেয়েছেন। ভিজিডি চালও তুলে নিয়েছেন তারা।
মহিলা বিষায়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভিজিডি কার্ডধারী চূড়ান্ত তালিকায় বড়বগী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার পাড়া গ্রামে ৪২ নম্বর সিরিয়ালে সালমা বেগমের নামে একটি ভিজিডি কার্ড রয়েছে। তার নামে ২০২৩-২৪ সালের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ইস্যু করা কার্ডের ভিজিডি চালও পাচ্ছেন তিনি। অথচ তার পরিবার বেশ সচ্ছল, স্বামী সরকারি শিক্ষক।
এ বিষয় জানতে চাইলে সালমা বেগমের স্বামী শাহ নেওয়াজ সেলিম বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি এটা সঠিক। আর আমার স্ত্রীর নামের ভিজিডি কার্ড আছে এটাও সঠিক। কিন্তু আমাদের এতে দোষ নেই। ভিজিডির ওই তালিকায় আমাদের নাম দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
বড় বগী ইউনিয়ন সচিব এমরান হোসাইন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে তার ভিজিডি কার্ড নম্বর ১৩৫। অভিযোগ পেয়ে কার্ডটি বাতিলের জন্য রেজুলেশন করে মহিলা বিষয়াক অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
বড় বগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন আলম মুন্সী বলেন, আমি এ বিষয়ে বলতে পারব না। এই ভিজিডি নামের তালিকা দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এ বিষয়ে তালতলীর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রূপ কুমার পাল বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ায় শিক্ষকের স্ত্রীর কার্ডটি বাতিল করে নতুন কারও নামে কার্ড তৈরি করা হবে।
এ ব্যাপারে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, এটাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো স্বজনপ্রীতি হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দার বলেন, ভিজিডি কার্ডের নামের তালিকা দেওয়ার সময় ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী সুপারিশ করা হয়েছে। ভোটার আইডিতে স্বামীর নাম না থাকায় এ ভুলগুলো হয়। তবে পরিচয় গোপন করে এমনটা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মূলত অসচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, উপার্জন অক্ষম, নিয়মিত আয় নেই, ভূমিহীন নারীদের মধ্য ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের জন্য এই সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। এর আওতায় তারা দুই বছর মেয়াদে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। এ ছাড়া যেসব পরিবার দৈনিক দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে, অনুন্নত বসতবাড়িতে থাকে, প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে তাদের এতে অগ্রাধিকার রয়েছে।
এসআইএইচ