নদী খননে কোটি টাকা ব্যয়েও মিলছে না সুফল
যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার কারণে বরগুনার প্রাণ বলা হয় খাকদোন নদীকে। এ নদীতে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতি বছরই নদী খনন করছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে প্রতি বছর এই নদী খননে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাঙ্খিত সুফল মিলছে না। গত তিন মাস ধরে খনন কাজ চলমান থাকলেও এখনও ভাটার সময় নাব্যতা সংকটে নদীতে আটকে যাচ্ছে নৌযান। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনকারীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি তিন কোটি টাকা ব্যয়ে খাকদোন নদী থেকে আড়াই লাখ কিউবিক মিটার পলি অপসারণের কাজ পেয়ে তা শুরুও করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন। ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার মিটারের খনন কাজ শেষও হয়েছে।
এদিকে নৌযান সংশ্লিষ্টদের দাবি, খননে অনিয়মের কারণে নৌযান চলাচলে কোনো সুফল আসছে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই খাকদোন নদীতে খনন হচ্ছে। তবে তা নদী সংলগ্ন যেসব স্থানে মাটি ফেলানোর জায়গা পাওয়া গেছে শুধুমাত্র সেই সময় ড্রেজার চালানো হয়েছে। বাকি সময় বন্ধ থেকেছে খনন যন্ত্র। কিছু কিছু জায়গায় মাটি বিক্রির অভিযোগও করেন এলাকাবাসী।
পোটকাখালী এলাকার সালেহ আরাফাত বলেন, গত দুই বছর থেকে এই ড্রেজার মেশিনটি নদীতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝেমধ্যে দেখেছি মেশিন চালু হতে। বুঝি না এটার নিয়ম কি! যেখানে এত দিন বাঁধা ছিল সেখানে এমন গভীর করেছে যে রাস্তাই নদীতে বিলীন হচ্ছে।
বরগুনা বাজারের ফল ব্যবসায়ী শফিক বলেন, আমরা ফল ব্যবসায়ীরা লঞ্চে করেই মালামাল আনি। কিন্তু নাব্যতা সংকটের জন্য লঞ্চ খাকদোন নদীতে এসে আটকে থাকায় মালামাল ঠিক সময়ে নামানো যায় না। অনেক লোকসান গুনতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচলরত এমভি অথৈ-১ লঞ্চের মাস্টার শাহিন বলেন, ৩ মাস ধরে খাকদোন নদীতে খনন চললেও নৌযান চলাচল করতে পারছে না। জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে এখন নৌযান চলাচল করতে হচ্ছে। ভাটার সময় নদীর তলদেশে আটকে গিয়ে নৌযান থেমে যাচ্ছে।
এমকে শিপিং লাইনের বরগুনার ম্যানেজার মো. এনায়েত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে আমাদের লঞ্চ চলছে৷ এইটুকু পথে আসতেই আমাদের ২-৩ ঘণ্টার অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হচ্ছে। যেখানে খনন করা দরকার সেখানে খনন হচ্ছে না। আবার যেখানে দরকার না সেখানেও খনন হচ্ছে। এতে করে হুমকিতে পড়ছে নৌযান চলাচল। এভাবে চললে আমাদের জাহাজ এই ঘাটে চালানো সম্ভব হবে না।
নদী পরিব্রাজক দলের বরগুনা জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, দেশের অন্যতম দীর্ঘ নদীপথ বরগুনা। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পর মালিকপক্ষ এখানে ভালো মানের লঞ্চ দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্ত নাব্যতা সংকটের কারণে ভালো মানের লঞ্চ এখন আসতে পারেনা। এটা আমাদের দূর্ভাগ্য। দ্রুত এর সমাধান চাই।
এ প্রসঙ্গে ক্যাসেল কনেসট্রাকশনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, শহরের সব বর্জ্য এই নদীতে ফেলা হয়। ড্রেজার চালুর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে বর্জ্যের কারণে আটকে ধরে। পরে সেটা পরিষ্কার করতে দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যায়।
তিনি আরও বলেন, সময় লাগলেও আমরা ভালোভাবে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি খনন কাজ পুরোপুরি শেষ হলে নৌযান চলাচলে সুফল মিলবে।
এ ব্যাপারে বরগুনার নদী বন্দরের সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, খাকদোন নদীতে চলমান প্রকল্পের আওতায় মোট চার ভাগে খাকদোন নদীর ২ হাজার ৭৭০ মিটার খনন করা হবে। কিন্তু মাটি অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় সময় নষ্ট হচ্ছে। যদি পর্যাপ্ত স্থান দেওয়া যায় তবে আগামী জুন মাসে খনন কাজ পুরোপুরি শেষ হবে বলে আশা করি।
এসআইএইচ