রমেকে ডায়ালাইসিসের উপকরণ নেই, ভোগান্তিতে রোগীরা
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে বেকায়দায় পড়েছেন রোগীরা। এমন অবস্থায় বাইরে থেকে চিকিৎসার সব উপকরণ কিনে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। কিডনি রোগীদের একবার ডায়ালাইসিস করতে ৩ হাজার টাকার চিকিৎসা উপকরণ কিনতে হচ্ছে। স্বল্প আয়ের রোগীরা ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অর্থের অভাবে অনেক রোগীর ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। অনেকেরই শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা কিডনি রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, এখানে ডায়ালাইসিস চিকিৎসার যন্ত্র ছাড়া কোনো উপকরণ নেই। সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। এ নিয়ে বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলেও কোনো উপকরণ সরবরাহ করা হয়নি। উপকরণ কিনতে না পেরে সপ্তাহে দুইবারের পরিবর্তে মাসে একবার ডায়ালাইসিস করছেন অসহায় কিডনি রোগীরা। যে রোগীরা প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে পারছেন না তাদের চিকিৎসা চলছে না। এতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে বিনা চিকিৎসায় অসহায় হয়ে পড়ছেন তারা।
রংপুর মেডিকেলের কিডনি ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে ঘুরে এবং কিডনি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতির তথ্য।
ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে এসেছেন সালমা বেগম (৫৫)। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, চিকিৎসা উপকরণ কিনতে না পারায় আমার ডায়ালাইসিস হচ্ছে না। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারছি না।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে ডায়ালাইসিস করতে এসেছেন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ৩ হাজার টাকার উপকরণ কিনতে না পারায় মাসে আটবারের পরিবর্তে চারবার ডায়ালাইসিস করছি। এখন আমার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এভাবে আরও কিছুদিন চললে আমি মারা যাব।
গাইবান্ধা থেকে আসা কিডনি রোগী শাহজাহান আলী ও দিনাজপুরের সোলায়মান মিয়া জানান, দুটি ছাগল ও একটি করে গরু বিক্রি করে উপকরণ কিনে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন। এখন আর কোনো উপায় নেই। পরিবারের সক্ষমতা নেই, এত টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করানোর। এখন বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছেন তারা।
এদিকে,কিডনি ডায়ালাইসিস রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, কেউ কেউ সব উপকরণ কিনতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। অনেকে এসব উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।
রমেক হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডের নার্স মো. রানা বলেন, ২৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। সবগুলো সচল। কিন্তু উপকরণ সরবরাহ না থাকায় অনেকের পক্ষে ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হচ্ছে না। আগে রোগীদের জায়গা দিতে পারতাম না। এখন রোগী নেই। যারা আসছেন তারা বাইরে থেকে সব উপকরণ কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন কিডনি রোগী ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সপ্তাহে দুদিন করে ৪৮ বার ডায়ালাইসিস করাতে পারেন। কিডনি রোগীদের প্যাকেজ সুবিধা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাদের দুটো কিডনি বিকল, একমাত্র তাদের সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করানো হয়। আগে সব ধরনের উপকরণ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হতো। দেড় মাস ধরে প্রত্যেক রোগীকে ডায়ালাইসিসের সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনে আনলে ডায়ালাইসিস করানো হয়। এসব উপকরণ কিনতে ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সপ্তাহে দুবার করলে ৬ হাজার টাকা লাগে। সে হিসাবে মাসে ৮ বার ডায়ালাইসিস করতে ২৪ হাজার টাকা লাগে। একজন অসহায় রোগীর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ডায়ালাইসিস সেবা অনেকটা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ. ম আখতারুজ্জামান বলেন, কিছুদিন হলো আমি এখানে যোগ দিয়েছি। অনেকদিন ধরে ডায়ালাইসিস চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এসজি