শংকরপাশা-আমতলা সড়ক উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের গাফিলতির অভিযোগ
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ভাঙাগেট-শংকরপাশা-চাকই হয়ে আমতলা সড়ক উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ না করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ। ইটের খোয়া, বালি মিশ্রিত করে রাখা সড়কটি কার্পেটিং না করার কারণে ধূলায় রাস্তার পাশের বাড়ি-ঘরে বসবাস করা কষ্টসাধ্য। অনেক পথচারি ধূলার হাত থেকে রক্ষার জন্য রেইন কোর্ট ব্যবহার করছেন। যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, আন্তঃজেলা সংযোগ সড়ক দিয়ে নড়াইল এবং গোপালগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করে এই এলাকার লোকজন। তা ছাড়া নড়াইল এবং অভয়নগর উপজেলার চার ইউনিয়নের লোকজন এই সড়ক দিয়ে নওয়াপাড়ায় যাতায়াত করেন। অথচ এই সড়কের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের অক্টবর মাসে। ওই সময়ের মধ্যে রাস্তার ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়। মেয়াদের পর আর কিছু কাজ হয়েছে তাতে কাজের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশ।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর ধরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাঙ্গাগেট বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা-নাউলী বাজার সড়কের প্রায় ২১ কিলোমিটার উন্নয়ন কাজ চলছে। ৫৫ শতাংশ কাজের পর শেষ হয়ে যায় কাজের মেয়াদ। পরে কাজের মেয়াদ আরও সাড়ে তিন মাস বাড়ানো হয়। কিন্তু বাড়েনি সড়ক উন্নয়ন কাজের গতি।
সূত্রে আরও জানা যায়, প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পল্লী সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়কটির উন্নয়ন কাজ চলছে। এর মধ্যে ঠিকাদারকে ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এ কাজটি করছে।
২০২১ সালের ১১ এপ্রিল থেকে সড়কটির কাজ শুরু হয়ে ১০ অক্টোবর ২০২২ কাজের মেয়াদ শেষ হয়। পরে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি করা হয়। ইতিমধ্যে সেই মেয়াদও শেষ হয়েছে। ১২ ফুটের সড়কটির দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট বাড়িয়ে সড়কটি ১৮ ফুট করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শংকরপাশা ফেরিঘাটের মোড় থেকে আমতলা বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে মাটি খুঁড়ে সড়কের আগের পিচের টুকরো, খোয়া ও বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আমতলা বাজার থেকে লেবুগাতী সেতু পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের আগের পিচ উঠিয়ে তার সঙ্গে বালু এবং ইটের খোয়া মিশিয়ে রোলার দিয়ে সমান করে রাখা হয়েছে। যানবাহন চলাচল করায় সড়কের এই অংশে খোয়া উঠে গেছে। কোথাও কোথাও ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চৌরাস্তা থেকে শংকরপাশা ফেরিঘাটের মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কে ইটের খোয়া মিশিয়ে সমান করে রাখা হয়েছে। সড়কজুড়ে ছড়িয়ে থাকা খোয়া এবং সেই খোয়া ভেঙ্গে সৃষ্টি হওয়া লাল ধুলোবালুতে রাস্তার পাশের ফল-ফসলের গাছ রঙিন হয়ে আছে। রাস্তার পাশের বাড়ি-ঘরে ধূলার পরত পড়েছে। অনেকে চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তা খুঁজছে।
বাইসাইকেলে চলাচলকারী মাদ্রাসা শিক্ষক আনন্দ কুমার মন্ডল বলেন, যানবাহন চলার সময় লাল ধূলা উড়ে। ভালো জামা পরে মাদ্রাসায় আসা যায় না। মাদ্রাসায় যেয়ে ধূলাবালি ঝেড়ে ক্লাসে যেতে হয়। খোয়ার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তার বেশিরভাগ অংশে খোয়া উঠে গেছে।
পাচুয়াড়ি গ্রামের ওমর আলী মুন্সি বলেন, আমার বাড়ি-ঘরে লাল ধূলা পড়েছে। ভাত খেতে গেলে ভাতের সাথেও ধূলা মিশে যাচ্ছে। আমারা নিরুপায় হয়ে সহ্য করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ মোল্যা বলেন, ‘সাংবাদিক সাহেব আপনি আমার নামে লিখে দেন রাস্তার কাজ কবে শেষ হবে তা জনগণ জানতে চায়। ওই রাস্তা ধূলাবালির কারণে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি সুমন খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দ্রুত কার্পেটিং করব। ধূলাবালি না ওড়ার জন্য নিয়মিত পানি দেওয়া হচ্ছে। যেখানে খোয়া-বালি উঠে গেছে সেখানে আবার মেরামত করা করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী এসএম ইয়াফি বলেন, ওই রাস্তাটি ঠিকাদার ধীর গতিতে কাজ করছেন। এতে মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছি। আপনি একটু নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানান।
যশোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, সড়কে ধীর গতির কারণে জনগণ ভোগান্তির শিকার হোক এটা কাম্য নয়। আমি নিয়মিত পানি দিয়ে ভেজাতে বলেছি। খোঁজ নিয়ে দেখেন নিয়মিত পানি দেওয়া হচ্ছে কিনা?
এসআইএইচ