খুমেকে নবজাতক চুরি, সংঘবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট!
খুমেক হাসপাতালে সংঘবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় অসুস্থ্য রোগীরা, হাসপাতালের সামনে থেকে নবজাতক শিশু চুরি। নবজাতকটির মামা মোস্তফা জানান, গত মঙ্গলবার সকালে আমার বোন রানিমা বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে ফকিরহাট উপজেলা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে সন্তান জন্ম নিলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়।
হাসপাতালের গেটের সামনে এসে গাড়িভাড়া নিয়ে চালকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই চালক গাড়ির চাবি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেন। এরমধ্যে আরও কয়েকজন চালক আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে মারমুখী আচরণ করেন। তাদের সঙ্গে একজন নারীও ছিল। মোস্তফা বলেন, ওই নারী নবজাতককের খালা সোনিয়া বেগমের কাছ থেকে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যান। ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে নবজাতক শিশুটিকে আর পাওয়া যায়নি। ওই মহিলাকে খোঁজার খুঁজি অব্যাহত রয়েছে।
সংঘবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় অসুস্থ্য রোগীরা। প্রতিদিন যেন বেড়েই চলছে এদের রাজত্ব কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ নেই। এদিকে বিষয়টি নিয়ে খুমেক হাসপাতাল প্রশাসন বেশ কয়েকবার মিটিং ও এসব রোগী পরিবহন গাড়ী গুলোর চাকার হাওয়া ছেড়ে দিলেও পরের দিন আগের মত হাসপাতাল সড়কের বিভিন্ন চত্বর দখল করে দাপিয়ে বেড়ায়। যে কারণে খুমেক হাসপাতাল প্রশাসন নির্বিকার ও অসহায় এসব অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে।
পাশাপাশি হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মচারীদের সহায়তায় ও স্থানীয় প্রভাবশালি মহলের ছত্রছায়ায় যেন এসব অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা এখন নিয়ন্ত্রণহীন। সরেজমিনে দেখা যায় খুমেক হাসপাতালে জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে হাসপাতাল চত্বর ঘিরে অপেক্ষমান প্রায় শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। খুমেক হাসপাতালে রোগীদের জন্য ৫০০ বেডের ব্যবস্থা প্রতিদিন চিকিৎসাধীন থাকে ১২শো থেকে ১৫ শোর মত রোগী।
এসব অসুস্থ রোগীদের ছাড়পত্র পাওয়া বাড়ীতে যাওয়া বা জরুরী ভিত্তিতে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় অ্যাম্বুলেন্স। তবে দেখা যায় অধিকাংশ এসব অ্যাম্বুলেন্স গুলো পুরাতন মডেলের মাইক্রোবাসগুলো ভিতরে সিট কেটে আর বাহিরে লাল রং দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স লিখেও উপরে একটি জরুরী হুইসেল বাতি স্থাপন করে বানিয়ে ফেলেছেন রোগী পরিবহন অ্যাম্বুলেন্স। এসব গাড়ী চলে খুমেক হাসপাতালে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী রোগী স্বজন রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ী মোড়েলগঞ্জ আমার ফুফু অসুস্থ্য ছিল তাকে বাড়ীতে নেয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন ছিল। তবে এখানে আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। বেশি অর্থ দাব করায় আমি আমার এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে অন্য জায়গার থেকে কম ভাড়ায় একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসলে রোগীকে বাহিরের কোন অ্যাম্বুলেন্স গাড়ীতে তুলতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমি হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের অবগত করি তবে তারা বলে এবিষয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না।
এক পর্যায়ে তাদের অনেক অনুরোধ করার পর আমাকে বলে এর পর যেন এমন ভুল না হয়। অ্যাম্বুলেন্স চালককে ধমক ও সতর্ক করে যেন আর কখনও হাসপাতালে প্রবেশ না করে। এবিষয়ে নাম প্রকাশ না শর্তে হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন আনসার সদস্য বলেন, এখানে অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা খুবই বেপোরোয়া এদের একটি বড় সিন্ডিকেট আছে এমনকি নিজেরা জায়গা বুঝে ভাড়া ও নির্ধারণ করে রাখে।
এর থেকে কম কোন চালক নিলে তার বিরুদ্ধে চলে যায় অন্য সব চালক এছাড়া হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মচারী ওয়ার্ডবয় বা আয়াদের সঙ্গে এদের একটি শতকরা ২০% কমিশন চুক্তি থাকে। এরা রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স ট্রিপ পাইয়ে দিলে নগদ কমিশন পেয়ে যায়। এভাবে চলছে খুমেক হাসপাতালে রোগী পরিবহন ব্যবস্থা।
এছাড়া সরকারী অ্যাম্বুলেন্স মাত্র ৬টি এরা অধিকাংশ সময়ে অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। যেমন কোন কর্মকর্তা বাহিরে যাবে বা অন্য কোন কাজ থাকলে তারা সরকারী রোগী পরিবহন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বের হয়। এ বিষয়ে বেসরকারী এ্যম্বুলেন্স চালক মো. ওবায়দুল বলেন, এখানে প্রায় ৯০টির মত অ্যাম্বুলেন্স আছে।
এছাড়া এখন তেমন একটা ট্রিপ পাওয়া যায় না। পাশাপাশি জালানি তেলের দাম বেড়েছে। যে কারণে রোগীরা মনে করে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তবে সিরিয়াল আছে গাড়ীর যদি কোন গাড়ী সিরিয়াল না মানে তখন আমরা তাদের আটকে দেই। তবে বাহিরের অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেয়া হয়না এটা মিথ্যা কথা।
এবিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল হাসান বলেন, আমরা খুবই বিরক্ত এসব মালিকানাধীন অ্যাম্বুল্সে চালকের জন্য। আমরা হাসপাতালের অফিস সময়ে কোন অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেই না। এছাড়া বেশ কয়েকবার এসব অ্যাম্বুলেন্স এর চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।
পাশাপাশি আমরা বেশ কয়েকবার কঠোরভাবে সতর্ক করেছি। তবে দীর্ঘমেয়াদি কোন সুফল আসেনি। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক কিছু প্রভাশালী মহলদের চাপ ও আমাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এরা ইচ্ছেমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে খুমেক হাসপাতালে।
খুলনা সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মোঃ মমতাজুর হক বলেন, খুমেক হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে হাতাহাতির সুযোগে নবজাতক চুরির ঘটনা আমি শুনেছি, তবে এই ঘটনায় কোন মামলা বা অভিযোগ হয়নি। মামলা বা অভিযোগ হলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এএজেড