মরিচের বাম্পার ফলন, দামও খুশী চাষিরা
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে এ বছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামেও খূশী এ অঞ্চলের মরিচ চাষিরা। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ভরা মৌসুমে মরিচের ভাল দাম পেয়ে দ্বিগুন লাভবান হয়েছেন মরিচ চাষিরা। প্রতি বছর চাষিরা মরিচের চাষাবাদ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। ক্ষেতের মধ্যেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে মরিচ বিক্রি করতে পেরে স্বস্তিও পেয়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
মরিচের ব্যাপক চাহিদা থাকায় স্থানীয় শতশত পাইকার ওই সব প্রান্তিক কৃষকদের কাজ থেকে মরিচ ক্রয় করে কুড়িগ্রাম জেলা শহরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাট, বড়বাড়ী ও মোস্তফী মরিচের হাটে ক্রয়কৃত মরিচ বিক্রি করে তারাও লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলার নাওডাঙ্গা, গোরকমন্ডপ, চর-গোরকমন্ডপ, বালাটারী, কুরুষাফেরুষা, গজেরকুটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু মরিচেই নয়।
মরিচের পাশাপাশি কৃষকরা বিভিন্ন ধরণের রবি শস্যের চাষবাদ করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলনসহ মরিচের ভাল দাম থাকায় চাষিরা মরিচ ক্ষেতে পরিচর্যা কাজ ব্যস্ত সময় পাড় করছেন, আবার কেউ ক্ষেতের মরিচ তুলছেন, অনেকেই আবার মরিচ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।
শতশত বিঘা জমিতে প্রচুর পরিমানে মরিচের চাষবাদ করেছেন চাষিরা। যে সকল চাষির নিজস্ব কোন জমি নেই, তারাও অন্যের জমি লিজ (কন্ট্রাক) নিয়ে মরিচসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করে জীবন-জীবিকা নিরবাহ করছেন। স্থানীয় পাইকাররা (ব্যবসায়ী) ক্ষেতের ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে মরিচ ক্রয় করে ট্রাক-অটোরিকসা ও ভ্যান যোগে কুড়িগ্রাম জেলা শহর, উলিপুর ও লালমনিরহাট শহর, বড়বাড়ী এবং মোস্তফী বাজারে গিয়ে দেশের দুর-দুরান্তের পাইকার (ব্যবসায়ীদের কাছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে মরিচের মন বিক্রি করছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার গজেরকুটি গ্রামের মরিচ চাষি আলহাজ্ব মজিবর হোসেন জানান, তিনি গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে আসছেন। তিনি প্রতি বছর পাঁচ বিঘা জমিতে মরিচের চাষবাদ করেন। এবছরও পাঁচ বিঘা জমিতে মরিচ চাষবাদ করে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন লাভবান হয়েছেন। তিনি আরও জানান, মরিচ একটি লাভজনক ফসল। এক বিঘা জমিতে ২০ থেকে সর্বচ্চ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্য বছর গুলোতে বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে এক বিঘা জমিতে মরিচ
বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। এ বছর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভাল দাম থাকায় ১ বিঘা প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা মরিচ বিক্রি করে আয় হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনি চার বিঘা জমির মরিচ ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা দরে ক্ষেতেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন।
উপজেলার পূর্বফুলমতি এলাকার মরিচ চাষি তৈয়ব আলী জানান, তিনি গত ২০ দিন আগেই এক বিঘা জমির মরিচ ক্ষেতই ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি আগাম মরিচ বিক্রি করায় এক বিঘা জমিতে খরচ মিটিয়ে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেছেন।
তিনি আরও জানান, গত বছর ভরা মৌসুমে ১ মন মরিচ বিক্রি করেছি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এ বছর মরিচের ভরা মৌসুমেও চাষিরা ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা মরিচের মন বিক্রি করছেন। টানা ১৫ দিন থেকে মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় যে সকল চাষি ক্ষেতে মরিচ বিক্রি করেননি, সেই সকল মরিচ চাষি এখন ভাল দাম পাওয়ায় দ্বিগুন লাভবান হয়েছেন।
স্থানীয় পাইকার (ব্যবসায়ী) বিপুল মিয়া ও হাসেন আলী জানান, তারা দুই জনে মিলে এ বছর কৃষকদের কাজ থেকে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা মনে মরিচ ক্রয় করে কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট , বড়বাড়ী, মোস্তফী গিয়ে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা বিক্রি করছেন। এই দুই পাইকার জানান মরিচের চাহিদা ও দাম ভাল থাকা কৃষকদের পাশাপাশি আমরাও লাভের মূখ দেখছি। তবে গত বছরের চেয়ে চাষিদের দ্বিগুন আয় হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, চলতি মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলায় ১২৭৫ হেক্টর জমিতে কৃষকরা মরিচের চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। মরিচের ভাল দাম পেয়েও খুশী হয়েছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ মরিচ চাষিদের বিভিন্ন ধরণে পরামর্শ প্রদানসহ সহায়তা করা হয়েছে। এবছর মরিচ চাষে কৃষকদের যতেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এএজেড