'শীতে ঝাড়ু নিয়ে হাত আর চলে না দাদা'

হরিজন সম্প্রদায়ের সোনিয়া বাঁশফোঁড়। ১৩ বছর ধরে ঝাড়ু দেয়ার কাজ করে দর্শনা বন্দর চেকপোস্টে। কাজের জন্য বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে চেকপোস্টে প্রতিদিন ভোর ৪ টায় আসতে হয় তার। কথা হয় সোনিয়ার সঙ্গে 'হাঁড় কাপানো সিতে ঝাড়ু নিয়ে হাত তো আর চলে না দাদা। ভোরে আচতেও খুব কচতো হয় সিতে। কাঁপতে কাঁপতে কাজ করতে হয়'। এভাবেই (ভোজপুরি ভাষা) নিজের মাতৃভাষায় শীতের কথা বলছিলেন সোনিয়া।
এদিকে ডাব বিক্রেতা বকুল একটু রোদের অপেক্ষায় ছিল। সকালের দিকে হেসে উঠল সুর্য মামা। বকুলের মুখেও হাসি। রোদ গায়ে মেখে গামছাটা গায়ে জড়িয়ে দোকান খুলল। বোরা ধানের মওসুম শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কাছা বেঁধে মাঠে নেমেছে এলাকার চাষীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মাঠে কাজ করতে হচ্ছে। এই তীব্র শীতে ধান লাগাতে গিয়ে পানির মধ্যে হাত অবশ হয়ে যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে খড়-কাঠের আগুন জ্বালিয়ে হাত দুটি একটু ছেঁকে নিচ্ছে দিনমজুরা। এরপর আবার কাঁদা-পানিতে কাজ শুরু করছে। তীব্র শীতে হাতদুটি মাঝে মাঝে থেমে গেলেও থেমে থাকছেনা জীবন-জীবিকার চাকা। কথা হয় ধান লাগানো মজুর বাবর আলীর সঙ্গে। ৫ জন গ্রুপ করে ধান লাগাচ্ছে। এক বিঘা ১৮০০ টাকা।
এক বিঘা ধান লাগাতে পারলে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা হাজরে হয়। মেয়েটা এবার ক্লাস সিক্সে উঠেছে। নতুন পোশাক ও গাইড বই লাগবে। সুতারাং শীত যতই হোক তার হাজরে করতে হবে। ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর বাবর আলী। আসলে পৌষের শেষে শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এদিকে এসব শীতার্ত মানুষের মাঝে প্রতিদিন জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিশেষ করে কম্বল বিতরন করা হচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় কম।
এএজেড
