নওগাঁয় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সহস্রাধিক, বেশির ভাগই শিশু

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁয় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। গত তিন-চার দিন ধরে সারাদিন সূর্যের তেমন দেখা মিলছে না। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। প্রচণ্ড শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে এ ধরনের রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে জেলার অনেক হাসপাতালে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সহস্রাধিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম ১৭দিনে (১ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩৮০ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৯৪৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর গত এক সপ্তাহে (গত ১৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বর) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৯৫ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭৬৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রচণ্ড শীতের কারণে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
নওগাঁর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে নওগাঁর ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ২৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬৭২ রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। গত সাত দিনে (১৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বর) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭২৮ জন।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ঠাণ্ডার কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড শীতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের সব সময় গরম পরিবেশে রাখতে হবে। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য সব সময় গরম খাবার খেতে হবে। কোনো সময় ঠাণ্ডা বা পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান বলেন, হিসাব করে দেখা গেছে যে গত তিন-চার দিন ধরে জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং নওগাঁ সদর হাসপাতাল মিলে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এটাকে ঠিক প্রকোপ বলা যাবে না। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এই সংখ্যা বেশি। প্রচণ্ড শীতই মূলত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। তবে ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এ ছাড়াও হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য কম্বলের প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে শীতের প্রকোপ অসহনীয় হয়ে উঠায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত নওগাঁ শহর ও এর আশপাশের এলাকায় সূর্যের দেখা মিলেনি। সড়ক-মহাসড়কে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানগুলাকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে দেখা গেছে।
আজ সোমবার সকালে নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এসআইএইচ
