নেতা-কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ বিএনপির
কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের উপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও পথে পথে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর এলাকায় খন্দকার হক টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে কুমিল্লায় নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তারা দুই দিন আগে থেকে সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে কুমিল্লায় বিএনপির লক্ষাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু কুমিল্লায় বিএনপির এই গণসমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সরকার দলীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশ বাহিনী কুমিল্লা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছে। তাদের হিংসা নারী-শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। তারা বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেখানে তাদের না পেয়ে পরিবার-পরিজনের উপর হামলা, ভাঙচুর এবং বাড়ির সামনে হেলমেট পরে সশস্ত্র অবস্থায় মোটরসাইকেল মহড়া ও হুমকি ধমকি দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গণসমাবেশের প্রচারণা চালানোর সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে নয়ন নামে আমাদের এক ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরে পুলিশ উল্টো বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। এ মামলায় তারা ইতিমধ্যে রফিক ও সাইদুল নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে ফেলেছ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ১০/১২ দিন যাবত তাণ্ডব চালাচ্ছে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। সেখানে পুলিশ পরিচয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে। লাকসামে পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদের বাড়িতে হুমকির পাশাপাশি হামলা চালিয়েছে। পুনরায় হামলার আশঙ্কায় মনির এখন এলাকা ছাড়া। লাকসাম-মনোহরগঞ্জের নেতা-কর্মীরা যেনো সমাবেশে আসতে না পারে সেজন্য তাদেরকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় কুমিল্লার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। এ পর্যন্ত আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও একই অবস্থা উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, কুমিল্লা বিভাগের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সরকার দলীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশ বাহিনী মিলে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। কিন্তু তারা যাই করুক কুমিল্লা বিভাগবাসীকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কুমিল্লার মুক্তিকামী ঐক্যবদ্ধ জনতা ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠ থেকে এ সরকারকে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করবে।
এ সময় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশের জন্য আমরা নয়াপল্টন বরাদ্দ চেয়েছিলাম। সে সময় সরকারের অনেক মন্ত্রী বলেছেন আমাদের ইজতেমা মাঠ দেওয়া হবে। এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইজতেমা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছে, সোহরাওয়ার্দী থেকে পল্টনেও আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী আবু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুই দিন আগে থেকেই সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেছে মানুষ। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর থেকেই সমাবেশ স্থল কুমিল্লা টাউন হল মাঠে এসে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও দেখা গেছে একই চিত্র। ক্ষণে-ক্ষণে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠছে টাউন হল মাঠ। দুপুরে সেখানেই জুম্মার নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়।
অন্যদিকে পরিবহন ধর্মঘট না থাকা সত্ত্বেও অনেকে আগেই সমাবেশ স্থলে চলে এসেছেন। লাকসাম থেকে কুমিল্লার সমাবেশে আসা মনিরুজ্জামান মনু বলেন, যেখানেই বিএনপি প্রোগ্রাম ডাকে সেখানেই আওয়ামী লীগ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা দুই দিন আগে কুমিল্লায় চলে এসেছি।
লাকসাম থেকে আসা আরেক ব্যক্তি জানান, আমাদেরকে কমিল্লায় আসার পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। সরকারের কিছু লোক আছে, তারা সবকিছুতেই আমাদের কেবল বাধা দেয়। তারা একদলীয় ভাবে মিছিল-মিটিং করবে। কিন্তু আমরা করতে গেলেই কেবল বাধা দেয়। পরিবহন ধর্মঘট না থাকলেও আমাদের পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। চিতৌষি রেইল এলাকায় কয়েকজন আমাদের বাধা দেয়। আমাদের অনেক ছেলেকে মারধর করেছে। তাই আমরা আগেই চলে এসেছি।
প্রসঙ্গত, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের মূল্য বৃদ্ধি, দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও বক্তব্য দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. জসিম উদ্দিন সভা সঞ্চালনা করবেন বলে জানা গেছে।
এসআইএইচ