সাগরে ইলিশ নেই, হতাশ জেলে-ট্রলার মালিকরা
'সাগরে ইলিশ নাই। দুই-আড়াই লাখ টাহা খরচা হইররা সাগরে যাইয়া হুদা আতে ফেরত আওয়া লাগতে আছে। বাড়তে টাহাও পাডাইতে পারি না, পাওনাদারগো ডরে বাড়তেও যাইতে পারি না। হাচা কথা ভাই মোরা এহন অসহায়।'-এ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটার জেলে রশিদ মিয়া। তার ভাষ্যমতে, সাগরে ইলিশ সংকট থাকার কারণে বিপাকে পড়েছেন তিনি। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না তিনি।
শুধুমাত্র রশিদ মিয়াই নয়, এই চিত্র বরগুনাসহ উপকূলীলের অধিকাংশ জেলে ও ট্রলার মালিকদের। অপরদিকে ঋণ পরিশোধের জন্য ট্রলার বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না মালিকরা। এ অবস্থায় মূলধন সংকটে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছে না অধিকাংশ মাছ ধরার ট্রলার।
জেলে ও ট্রলার মালিকরা জানান, দেড় থেকে দুই লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে ৮ থেকে ১০ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরার জন্য যায় ট্রলারগুলো। শত আশার পরও সাগরে ইলিশ না পাওয়ায় আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জেলে ও ট্রলার মালিকরা। ইলিশ না পাওয়ায় আয় হচ্ছে না তাদের। যার ফলে অর্থ সংকটে পড়ে ফের সাগরে ট্রলার পাঠাতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাগরে ইলিশ শিকার শেষে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফিরেছেন এফবি মায়ের দোয়া নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার। সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় ওই ট্রলারের ১৬ জেলের চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ।
আফজাল হোসেন নামের এক জেলে বলেন, অনেক আশা করে সাগরে গিয়েও মাছ পাইনি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে যেতে হয় আমাদের। এভাবে খালি হাতে ফিরে আমরা অসহায় হয়ে পড়ছি।
লিটন ফরাজি নামে এক ট্রলার মালিক বলেন, ধার-দেনা শোধ করতে পারতেছি না। জাল, ট্রলার বিক্রি করতে চাই তবুও ক্রেতা পাচ্ছি না। এই কারবারে আগের মতো কেউ আসতে চায় না, খালি লস আর লস। কারণ সাগরেই ইলিশ নাই।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে ইলিশ নেই। টাকার অভাবে অনেক মালিকই সাগরে ট্রলার পাঠাতে পারছে না। ট্রলারগুলো বিক্রিও করতে পারছেন না।
তিনি মনে করেন, এমতাবস্থায় যদি বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এই ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন তারা।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) থেকে পাওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, ২০২১ সালে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর ২৯ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই অবতরণ কেন্দ্রে ১১৫ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়। অপরদিকে একই সময়ে এই বছর ইলিশ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭৭ মেট্রিক টন।
এসআইএইচ