মনগড়া সদস্য বানিয়ে রেড ক্রিসেন্টের পাতানো নির্বাচনের পায়তারা!
আগামী ৩ ডিসেম্বর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বরগুনা ইউনিটের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোতালেব মিয়া। তবে তার বিরুদ্ধে সাধারণ সদস্য ও আজীবন সদস্য করার বিষয়ে স্বজনপ্রীতি এবং সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
সদস্য না হতে পারা অনেকে অভিযোগ করেন, নির্বাচনে এককভাবে জয়ী হওয়ার উদ্দেশে নিজের মনগড়া সদস্য করেছেন তিনি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সদস্য ফরম ক্রয় করতে গিয়ে পাওয়া না গেলেও তফসিল ঘোষণার পরই উন্মুক্ত করা হয়েছে ফরম। এর ফলে নতুন করে সদস্য হওয়া কেউ এখন আর নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে বরগুনা জেলা রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সর্বশেষ নির্বাচনে অ্যাড. মোতালেব মিয়া জয় লাভ করেন। এরপর থেকেই সদস্য করার বিষয়ে তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে আসেন। তার সিদ্ধান্তের বাইরে কেউই সদস্য পদ লাভ করতে পারেন না। এমনকি তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কর্মরত একাধিক আইনজীবী সহকারী (মহরার) সদস্য হয়েছেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩ ডিসেম্বর বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
রেড ক্রিসেন্ট বরগুনা জেলা ইউনিট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণত রেড ক্রিসেন্টের তহবিল বৃদ্ধি করার উদ্দেশে সাধারণ সদস্য (বার্ষিক) ও আজীবন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে থাকে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। সদস্য হওয়ার জন্য স্ব-স্ব জেলা কার্যালয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সদস্য ফরম সংগ্রহ করার পর যথাযথ নিয়মে পূরণ করে জাতীয় পরিচয় পত্র, ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবিসহ বার্ষিক সদস্য পদের জন্য ২৩০ টাকা ও আজীবন সদস্যের জন্য ৩ হাজার ১৩০ টাকা চাঁদা দিয়ে সদস্য হতে হয়।
বরগুনা জেলায় বসবাসরত শতাধিক নাগরিক অভিযোগ করেন, তারা সদস্য হওয়ার সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও বরগুনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোতালেব মিয়ার নিকটজন না হওয়ার কারণে সদস্য হতে পারেননি।
বরগুনা সদরের মইনূল আবেদীন সুমন খান বলেন, একাধিকবার রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেও সদস্য হতে পারিনি। জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি সেক্রেটারীর অজুহাত দেন। সেক্রেটারীর কাছে গেলে তিনি কেন্দ্রের অজুহাতে পিছিয়ে যান।
মালেক মিঠু নামে আরেকজন বলেন, আমরা সদস্য হতে না পারলেও মোতালেব মিয়ার সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি, নিকটজন, স্বজন অনেকেই এ বছর নতুন সদস্য হয়েছে তফসিল ঘোষণার আগেই। তফসিল ঘোষণার আগে সদস্য না হতে পারলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এখন আবারও ফরম বিক্রি শুরু করেছে। মূলত মনগড়া নতুন সদস্য বানিয়ে পাতানো নির্বাচনের পায়তারা চলছে।
এ ব্যাপারে রেড ক্রিসেন্টের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, আমরা সাধারণত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও জেলা পর্যায়ে যে সকল নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকেন তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করি। আমি চাইলেও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে যাওয়ার আমার সুযোগ নাই। সদস্য হতে হলে তার কাছে অনুমতি নিয়ে আসলেই আমি কেবল ফরম বিক্রি করতে পারি। তবে বরগুনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটে সকলের জন্য ফরম উন্মুক্ত রয়েছে। সকল নিয়ম-নীতি মেনে যে কেউ, যেকোনো সময় চাইলে সদস্য হতে পারবেন।
এদিকে চেষ্টা করেও এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাড. মোতালেব মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, সকলের রেড ক্রিসেন্টের আজীবন বা বার্ষিক সদস্য হওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে। আর কেউ যদি সদস্য হওয়ার জন্য বারবার অফিসে গিয়েও ফরম না পেয়ে থাকেন অথবা অফিসের কারো বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকে লিখিত অভিযোগ দিলে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরো বলেন, রেড ক্রিসেন্ট একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনটি ৭টি মূলনীতি নিয়ে চলে। এই ৭টি মূল নীতির বাইরে যাবার কোনও সুযোগ নেই।
এসআইএইচ