ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগীরা
বরগুনার ১৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। চিকিৎসক সংকটসহ নানান সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে করে চিকিৎসা সেবা পেতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষেরা।
সরেজমিনে জেনারেল হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে সবচেয়ে বেশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেখা যায়। তারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবিও তুলছেন। চেম্বারের বাইরে রোগীদের অপেক্ষায় থাকার জন্য বসার জায়গার বেশির ভাগ স্থান তারা দখল করে রেখেছেন।
এর আগেও ওষুধ কোম্পানির দুই ইনফরমেশন অফিসার মামুন ও তন্ময়কে কোম্পানির কার্ড ঝুঁলিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে তাদের ওষুধ লেখানোর জন্য ডাক্তারদেরকে উৎকোচ দেওয়ার জন্য ঘুরতে দেখা যায়। এমন সময় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান তারা।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশ ঝুলানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকরা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির স্বাক্ষাৎ গ্রহণ করবেন না। অতএব সকল পর্যায়ে কর্মরত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতাল প্রাঙ্গনে অবস্থান না করার জন্য বলা হলো।
এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারী বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। এর মধ্য বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোক ডাক্তারদের রুমে এসে অনেক সময় নষ্ট করে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি।’
আরও এক নারী বলেন, ‘অনেকে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রোগ সম্পর্কে জেনে যায় এবং আমাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। প্রেসক্রিপশন দেখাতে না চাইলেও তারা বারবার ছবি তোলার জন্য অনুরোধ করে।’
এ বিষয়ে বরগুনা স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরামের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন অপু বলেন, ‘প্রায়ই জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ-খবর নিতে আসি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কক্ষের দরজায় নোটিশে লেখা ‘সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত’ কোনও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির দেখা করা নিষেধ। এ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে না কেউ? রোগীরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়েও টানাহেঁচড়ার অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন রোগীরা। দ্রুত এর প্রতিকার দরকার।,
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া) বরগুনার সভাপতি মহাসিন খান বলেন, ‘বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাক্তার ভিজিটের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টার পরে সাক্ষাতের অনুমতি আনা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনও কোম্পানির লোক ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে ভিড় করেন, জটলা করেন। এতে সমস্যা হয়। আমরা সমস্যার কথা চিঠিতে লিখে দিয়েছি। এখন যা করার ডিসি সাহেব করবেন।’
এসআইএইচ