সাহিত্যিকরাই জানে না সাহিত্য মেলার খবর
সুপরিচিত কবি-সাহিত্যিকদের বাদ দিয়ে সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন এমন ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করে বরগুনা জেলায় সাহিত্য মেলার আয়োজন হয়েছে বলে দাবি করেছেন একটি পক্ষ। শুধু তাই নয়, মেলার ব্যয়বাবদ বরাদ্দ দেওয়া অর্থও যথাযথ ব্যয় হয়নি বলেও গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ৫০ জন কবি-সাহিত্যিক ও লেখককে নিয়ে সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবন্ধ, পুঁথিপাঠ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দুপুর ১টায় মেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হয়।
কিন্তু এতে জেলার একাধিক কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক নাখোশ। তাদের অভিযোগ, তাদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে লেখালেখি ও সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন অনেককেই ডেকে নিবন্ধন করিয়ে দায়সারাভাবে মেলার আয়োজন হয়েছে। এতে মেলার মূল লক্ষ অর্জিত না হয়ে বরাদ্দের অর্থ বৃথাই খরচ হয়েছে।
এবিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্য মতে, তৃণমূল পর্যায়ের কবি সাহিত্যিকদের জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে ৩০টি জেলায় সাহিত্য সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেলার ব্যয়বাবদ প্রতি জেলায় ৫ লাখ করে মোট ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়।
দুটি কাব্যগ্রন্থের লেখক ও একাধিক গ্রন্থের সম্পাদক মর্তুজা হাসান সৈকত। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পাশাপাশি আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সাহিত্য মেলা বাস্তবায়ন কমিটি সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখায় জেলার সাহিত্যিকরা জানতেই পারেননি যে এ রকম একটা আয়োজন হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি মেলা বাস্তবায়ন কমিটি তাদের পছন্দের কিছু লোককে দিয়ে নিবন্ধন করিয়েছে। মূলত এই অংশটাই মেলায় অংশ নিয়েছে।
সৈকত আরও বলেন, অনেকটা চুপিসারে মেলার আয়োজন সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। তারা জেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রবন্ধ লেখার জন্য যে দুজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করেছিল তাদের একজনের প্রবন্ধের মান এতটাই খারাপ যে, বাংলা একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটিকে বাতিল করতে বাধ্য হন। অথচ এ জেলা থেকেই উঠে এসেছেন দেশবরেণ্য কবি ও প্রাবন্ধিক মতিন বৈরাগী, বহুমাত্রিক শব্দসৈনিক কবি মোশতাক আল মেহেদী, কবি ও কথাসাহিত্যিক জহিরুল হক, সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কবি ও প্রাবন্ধিক আখতারুজ্জামান আজাদ, পরমাণুকাব্য নামে কবিতার নতুন ধরন নিয়ে আসা কবি সুশান্ত পোদ্দার, অনুকাব্য লেখক রুদ্র রুহান, প্রাবন্ধিক আবদুর রহমান সালেহ, কবি শাওন মুতাইত, কবি মিজান হাওলাদার, কবি শুক্লা দেবনাথ, কবি ও গল্পকার আরেফিন সায়ন্তী, কবি ও প্রচ্ছদ শিল্পী আল নোমানসহ আরও অনেকে। এদের অনেকেই বরগুনায় অবস্থান করেই সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছেন। কিন্তু মেলার বিষয়ে এদের কাউকেই কিছু না জানিয়ে এমন কাঙাল টাইপের সাহিত্য মেলার আয়োজন করে রাষ্ট্রের এতগুলো টাকার অপচয় কেন করা হলো?
কবি শাওন মুতাইত বলেন, যারা জীবনে একটা ছড়া, কবিতা, গল্প কিংবা প্রবন্ধও লিখেননি মূলত তাদের নিয়েই সাহিত্য মেলার আয়োজন হয়েছে। এই মেলা ফলপ্রসু হতে পারে না।
সাহিত্য মেলায় আমন্ত্রণ না পাওয়ার কথা জানালেন কবি আতিক রহমান ও সুশান্ত পোদ্দার। লেখক ও কবি শামীমা সুলতানা বলেন, আমি মেলার আয়োজন সম্পর্কে কিছুই জানি না।
বরগুনা জেলা ব্র্যান্ডিং গানের রচয়িতা, অনুকাব্য লেখক ও আবৃত্তিকার রুদ্র রুহান বলেন, মেলায় যাদের সাহিত্যিক দেখানো হয়েছে তাদের অধিকাংশই সাহিত্য কী জিনিস এটাই হয়ত জানেন না বা বলতে পারবেন না। এমন লোকজনকে সাহিত্যিক পরিচয়ে কারা আমন্ত্রণ করেছে বুঝি না। সাহিত্যের চর্চা তো দূরে থাক, জীবদ্দশায় সাহিত্য পড়েওনি এমনও দু'একজনকে দেখলাম সেখানে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। ৫ লাখ টাকা বাজেটে তো জমকালো আয়োজন করা সম্ভব ছিল। কিন্ত কেন সেটা করা হয়নি আমারও প্রশ্ন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলা একাডেমি আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছে, আমরা তা অনুসরণ করেই মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
বাংলা একাডেমির পক্ষে সাহিত্য মেলার সমন্বয়ক এবং বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের উপপরিচালক ড. সায়মন জাকারিয়া মুঠোফোনে বলেন, সাহিত্য মেলার আয়োজনটা মূলত তৃণমূলের কবি-সাহিত্যিকদের জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য। জেলার কবি-সাহিত্যিকরা সেখানে আমন্ত্রিত হবেন। বরগুনায় যদি তেমন না হয়ে থাকে তবে তা দুঃখজনক। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এসএন