২৫ বছর ধরে ১৫ বিদ্যালয়ে ঝুলছে তালা
২৫ বছর ধরে টাঙ্গাইলের ১৫ কমিউনিটি বিদ্যালয়ে ঝুলছে তালা। এসব বিদ্যালয়ে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের চারপাশ আগাছা ও ঝোপ ঝাড়ে সয়লাব।
পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ের ভবনগুলো স্থানীয় লোকজন ক্লাব ও গোয়ালঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, এসব ভবনগুলোতে অবাধে চলে জুয়ার আসর ও অসামাজিক কার্যকলাপ।
জানা যায়, ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে নির্মিত এসব বিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুল চালু করার সময় স্থানীয়দের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল। সে অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তখন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিধি মোতাবেক যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক পাওয়া যায়নি। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বেতন কম থাকায় তারা শিক্ষকতা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যান। তখন থেকেই এসব বিদ্যালয় পরিত্যক্ত ভবনে রূপান্তরিত হয়।
যেসব এলাকায় সরকারি বা বেসরকারি বিদ্যালয় নেই সেসব এলাকায় সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বেগবান করার জন্য দুই যুগ আগে এসব কমিউনিটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৩৬টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এর মধ্যে ২১টি বিদ্যালয় বিভিন্ন ধাপে সরকারিকরণ হলেও আলোর মুখ দেখেনি বাকি ১৫টি বিদ্যালয়। এগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার উন্নয়নে রাখতে পারছে না কোনো ভূমিকা।
এ বিষয়ে বাসাইল সদর উপজেলার পালপাড়ায় বিদ্যালয়ের জমিদাতা বিজয় কান্তি চৌধুরী বলেন, আমাদের গ্রামে বিদ্যালয় হবে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে এই আশায় আমরা জমি দিয়েছিলাম। বিদ্যালয়ের ভবন হলো ঠিকই কিন্তু বন্ধ থাকায় তা আমাদের কোনো কাজে আসছে না। যদি চালু থাকত তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারত। আমাদেরকে আর দূরের বিদ্যালয়ে যেতে হতো না।
বাসাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদানন্দ পাল বলেন, আমি এগুলোর খোঁজ খবর নিয়েছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। এগুলো চালু করার কোনো সিদ্ধান্ত আপতত সরকারের নেই। তবে যদি পরবর্তী কোনো নির্দেশনা পাই তাহলে সেই অনুপাতে কাজ করব।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন যে গ্রামগুলোতে বিদ্যালয় নেই সেই গ্রামগুলোতে কমিউনিটি বিদ্যালয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিদ্যালয় করার জন্য জমি দেন। ৩৫-৪০টি বিদ্যালয়ের কাজ তখন শেষ হয়। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে বিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তায় পড়ে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায় দেশে ২৬ হাজার কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়। এর আওতায় বাসাইলে ২০-২৫টি বিদ্যালয় সরকারি করা হয়। তখনকার স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহানের নেতৃত্বে ২০-২৫টি কমিউনিটি বিদ্যালয় সরকারিকরণের জন্য আবেদন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তখন ২০-২৫টি বিদ্যালয় সরকারি হয়। সেই বিদ্যালয়গুলো এখন সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫টি কমিউনিটি বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় সেগুলো সরকারি করা যায়নি। তবে আবারও উদ্যোগ নিয়েছি ১৫টির মধ্যে ৭টি বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে ৭টি বিদ্যালয়ের নাম পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।
এসজি