শেষ হয়নি খুলনা কারাগার নির্মাণ, বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়
খুলনা জেলা কারাগারের নির্মাণ কাজ প্রায় সাড়ে আট বছর আগে শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। কয়েক দফায় বেড়েছে সময় এবং ব্যয় দুটোই। এর মধ্যে বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর দামও। ফলে কবে নাগাদ প্রকল্পটি শেষ হবে সেটা এখনও অনিশ্চিত। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
জানা যায়, ১৯১২ সালে ভৈরব নদের তীরে নির্মাণ করা হয়েছিল খুলনা জেলা কারাগার। যেখানে বন্দীর ধারণ ক্ষমতা পুরুষ ৫৯০ জন ও নারী ১৮ জন মিলে মোট ৬০৮ জনের। কিন্তু সেখানে বন্দী থাকে প্রায় দুই হাজার।
এছাড়া গোটা কারাগারটি ক্রমশই অতিঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এমন বাস্তবতায় ২০০৮ সালের ২০ জুলাই খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১১ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন মেলে। প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা।
২০১৪ সালে শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ কাজের। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ ও নকশা জটিলতা শেষ করার পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মেলে চূড়ান্ত নকশা (মাস্টার প্ল্যান)। ওই মাসেই খুলনার মেট্রোপলিটন পুলিশের হরিণটানা থানা এলাকা রূপসা বাইপাস সড়কের পাশে ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদের আসানখালী মৌজায় প্রায় ৩০ একর জমির ওপর আধুনিক জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বায় সংশোধিত করে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকাতে।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু ব্যক্তি মালিকানার জমি অধিগ্রহণ, কারাগার অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন চারতলা হাসপাতালটি পাঁচতলাকরণ, কারারক্ষীদের বাসভবন সম্প্রসারণ, দর্শনার্থীদের স্থান ও ভবনের বর্ধিতকরণসহ বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব সংযুক্ত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে করা হয়। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত।
জানা যায়, কারাগারের ৪১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৭৮টি অঙ্গের দৃশ্যমান কাজ হবে। এর মধ্যে ৩২টি প্যাকেজের অর্ধেকের বেশি কাজ হয়েছে। অবশিষ্ট ৯টি প্যাকেজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত বিভাগ। সেগুলো হচ্ছে- কারাগারের অভ্যন্তরের হাসপাতাল, ৩০০ জন ওয়ার্ডেন ব্যারাক ২ সেন্ট্রি বক্স, গ্যারেজ, ফুল, রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি), বহিস্থ পানি সরবরাহ, সারফেস ড্রেন উইথ কালভার্ট, এক্সটারনাল ইলেকট্রিফিকেশন, সোলার সিস্টেম, আরবরিকালচার, সয়েল এন্ড ম্যাটেরিয়াল টেস্ট।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মধু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, অর্থের অভাবে প্রকল্পের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করে অনেক দিন বসে থেকেছি। ইতোমধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দামও অনেক বেড়ে গেছে। তাই জানি না আমরা কিভাবে বাকি কাজ সম্পন্ন করবো।
গণপূর্ত বিভাগ-২ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাজিবুল ইসলাম জানান, সংশোধিত প্রস্তাবনাটি জুন মাসেই অনুমোদিত হয়েছে। যেখানে প্রকল্প বায় ৩৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৮৮ কোটি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এই মুহূর্তে সব কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, খুলনার নতুন এ কারাগারে গড়ে তোলা হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে নির্মাণ করা হবে ছোট বড় ৫২টি ভবন। দুই হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কারাগারটিতে থাকবে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্তদের জন্য পৃথক স্থান, মোটিভেশন সেন্টার, পুরুষ ও নারী বন্দীদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড, নারীদের জন্য ১০ এবং পুরুষদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতালসহ নানা সুবিধা।
এএজেড