রংপুর ভোটের মাঠে অর্থ লেনদেনের আশঙ্কা!
রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্থ-সম্পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী। এ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়তের জন প্রতিনিধিরা ভোট টানতে তৎপর হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী প্রর্থীর পক্ষে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থীর চেয়ে অর্থ-সম্পদে পিছিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. ইলিয়াস আহমেদ। তার নগদ অর্থ রয়েছেন মাত্র ৩০ হাজার টাকা। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ১৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার ৫২৪ নগদ টাকা রয়েছে। বার্ষিক আয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী এগিয়ে আছেন। নির্বাচন কমিশনের দাখিল করা হলফনামায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর অর্থ সম্পদে পিছিয়ে থাকায় ভোটের মাঠে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট নিয়ে অর্থের খেলা হবে। সেই সাথে মিঠাপুকুর ও পীরগাছা সহ জেলার বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা গোপনে এবারের নির্বাচনে ফাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের ভোট নিজের কব্জায় টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী প্রার্থী। যেকোন মূল্যে বিএনপি-জামায়াতের ভোট তিনি নিতে চান। এর ফলে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল অর্থের লেনদেনের শঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা এখনই বলা মুশকিল।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড.ইলিয়াস আহমেদ বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। জেলা পরিষদের নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন। তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ডিসি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
স্বাধীনতার আগে তিনি রংপুর সদর (মহকুমা) জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি রংপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। স্বাধীনতার পর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন, জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য এবং সহ-যুব সম্পাদক ছিলেন। তিনি টানা ২০ বছর রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি আইন জীবি পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
তার প্রতিদ্ব›দ্বী মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু মোটর সাইকেল প্রতীক পেয়েছেন। তিনি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। এর আগে তিনি জাসদ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও রংপুর চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের জেলার কমান্ডার ছিলেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদন্ধি প্রার্থী হওয়ায় সম্প্রতি তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়।
রংপুর জেলাপরিষদের নির্বাচনী হলফনামায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড, ইলিয়াস আহমেদ উল্লেখ করেন, তিনি এলএলবি পাস করেছেন। পেশায় আইনজীবী। কৃষি খাতে আয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ টাকা, পেশা থেকে আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা কৃত অর্থ ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে পোস্টাল সেভিংস রয়েছে ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু রয়েছে ৬ ভরি, নিজের নামে ১০ বিঘা ও স্ত্রীর নামে ২০ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। এ ছাড়া অকৃষি জমি ৩০ শতক, গ্রামে দোতলা বাড়ি এবং স্ত্রীর নামে টিন সেড বাড়ি রয়েছে। তার মুক্তিযোদ্ধা ঋণ রয়েছে ১০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলুর আত্মীয় স্বজনদের থেকে ধার অথবা কর্জ নেই। পেশায় ব্যবসায়ী। কৃষিখাতে তার রয়েছে ২৭ হাজার ২৯০ টাকার সম্পত্তি। বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকানসহ অন্য ভাড়া বাবদ আয় রয়েছে ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬০ টাকা। ব্যবসা বাবদ আয় রয়েছে ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৫১ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, একচেঞ্জ ইত্যাদিতে রয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বাস, ট্রাক, ছোট গাড়ি ইত্যদি বাবদ দেখানো হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা।
স্বর্ণ অন্য মূল্যবান পাথর রয়েছে ৫৫ হাজার টাকার। ইলেক্টনিক্স সামগ্রী রয়েছে ১ লাখ টাকার। আসবাবপত্র ১৫ হাজার টাকা। কৃষি জমি রয়েছে ৫৮ লাখ ৩ হাজার ২৫০ টাকার। এ ছাড়া অকৃষি জমি রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭০ টাকার। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে ১৫ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৬ টাকার। বাড়ি এপার্টমেন্ট ১ কোটি ৫৫ লাখ, ৪০ হাজার ৪৫০ টাকার। অন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৬ টাকা। অপরদিকে তার জামানত বিহীন ঋণ ৫০ লাখ এবং ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ১৯ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার ১৯৩ টাকা।
এবারের রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল। কারণ জেলার আট উপজেলার ৭৬টি ইউনিয়ন, তিন পৌরসভা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রতিনিধির বাহিরে অন্য দলের জন প্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা কোন ভাবেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে তাদের ভোট বিদ্রোহীর দিকে পড়তে পারে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর অর্থ সম্পদ বেশী সেহেতু এবারের নির্বাচনে অর্থের ছড়াছড়ি হতে পারে। রংপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, রংপুর জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১০৯৫ জন। চেয়ারম্যান পদে দুই জনসহ সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৪ এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৯ জন লড়াই করবেন। আগামী ১৭ অক্টোবর রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এএজেড