পঞ্চগড়ে নৌকাডুবির ৮ কারণ দেখিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন
নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এতে দুর্ঘটনার জন্য আটটি কারণ ও ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে পাঁচটি সুপারিশের কথা উল্লেখ করেছে কমিটি। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম সোমবার (০৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে ঢাকাপ্রকাশ-কে দুর্ঘটনার জন্য আটটির মধ্যে তিনটি কারণের কথা জানিয়েছেন। সেগুলো হলো- একাধিক শর্ত ভঙ্গসহ ইজারাদারের যথাযথ ভূমিকা না রাখা, মাঝিদের অদক্ষতা ও পারাপারে ত্রুটিপূর্ণ নৌকা ব্যবহার এবং স্থানীয় জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতি ও কুসংস্কার।
এর আগে গতকাল রবিবার রাতে নৌকাডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠন করা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) দীপঙ্কর রায় জেলা প্রশাসকের কাছে ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
১১৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা পরিষদ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট ইজারা নেন আবদুল জব্বার নামের এক ব্যক্তি। তিনি ইজারার একাধিক শর্ত ভঙ্গ করেছেন। শর্ত ভঙ্গ করে তিনি আরও চার ব্যক্তিকে ইজারার অংশীদার করেন।
এ ছাড়া ঘটনার দিন সেখানে লোকসমাগম বেশি হবে জেনেও নিজে উপস্থিত ছিলেন না। ঘাটে বোদা উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে সুশৃঙ্খল কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। ইজারাদারের দায়িত্ব অবহেলায় এসব প্রাণহানির দায় তিনি এড়াতে পারেন না। এমনকি তিনি যাত্রীদের ত্রুটিপূর্ণ নৌকা দিয়ে পারাপার করছিলেন। নৌকায় পারাপারের সময় যাত্রীদের ধর্মীয় অনুভূতি ও কুসংস্কারের কিছু বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া ঘটনার দিন সকালে বৃষ্টি থাকায় মহালয়ার অনুষ্ঠান ও পূজার সময় মেলাতে দুপুরে একসঙ্গে মানুষের চাপ সৃষ্টি হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এমন ঘটনা রোধে তদন্ত প্রতিবদনে পাঁচটি সুপারিশের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো, নিরাপত্তা ঝুঁকি-বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি, ইজারা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তদারকি বাড়ানো এবং খেয়াঘাটগুলোতে আরও উন্নত ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে মোবাইল ফোনে বলেন, তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাজারের পাশে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক মানুষ নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। যাত্রীদের অধিকাংশই বোদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ঘাট থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। এতে ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার হয় এবং এখনো তিনজন নিখোঁজ আছেন। ঘটনার দিন রাতে বোদা থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করেছিল পুলিশ।
ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসন থেকে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে তদন্ত কমিটির প্রধানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ আরও তিন কার্যদিবস বাড়ানো হয়।
এএজেড