প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যেভাবে ডুবেছিল নৌকাটি
ফাইল ছবি
ভয়াবহ এমন নৌ-দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এতগুলো লাশ দেখার সাক্ষী উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়। অনেকেই বলছেন এত বড় দুর্ঘটনা আর কখনোই ঘটেনি। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ৬৯টি লাশের মধ্যে নারী ৩০, শিশু ২১ ও পুরুষ ১৮। নিখোঁজ রয়েছেন আরও তিনজন।
নৌকাটি ডুবে যেতে পারে এমন ধারণায় অনেকেই ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় থেকে ডুবে যাওয়ার পর পর্যন্ত ফেসবুকে লাইভ এবং মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। সেই ভিডিওগুলোতে বারবার শোনা যায় অনেকে নৌকাটিতে যেতে নিষেধ করছিল এবং কেউ কেউ ‘ডুবে যাবে’বলেও চিৎকার করছিল।
করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির সময় সেই নদীতে মাছ শিকার করছিলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামন হাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩০)। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে জানালেন ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার আদ্যোপান্ত।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, গত রবিবার দুপুরে আউলিয়া ঘাট থেকে বোদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য একটি নৌকায় মানুষ হুড়াহুড়ি করে উঠতে থাকে। নৌকায় কানায় কানায় লোক ভর্তি হলে পাড়ে পুলিশ ও স্থানীয় অনেকেই এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। কিছু যাত্রীকে নেমে আসার জন্য অনুরোধ করলেও কেউ নেমে আসেননি। নৌকা চলতে শুরু করলে পাড় থেকে অনেকে সাবধানে যাওয়ার জন্য বারবার সতর্ক করেন। হঠাৎ মাঝ নদীতে গিয়ে নৌকার যাত্রীরা চিৎকার শুরু করে। এ সময় নৌকায় থাকা অনেকে যাত্রীদের নড়াচড়া না করতে বলেন। এরপর মুহূর্তেই নৌকাটি তলিয়ে যেতে শুরু করে ।
তিনি জানান, তারা কয়েকজন মিলে একটি ছোট নৌকায় করে ১২ জনকে জীবিত এবং ৬টি লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সাঁতার না জানায় নারী এবং শিশুরা তৎক্ষণাৎ ডুবে যায়।
ওই মুহূর্তের আরো এক প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকারী নিরঞ্জন বলেন, অনেকে তাড়াহুড়া করে একটি নৌকায় উঠছিল। অনেক নিষেধ করা সত্ত্বেও নৌকা নিয়ে নদী পার হচ্ছিল তারা। মাঝ পথে গিয়ে নৌকাটি উল্টে গিয়ে ডুবে যায়। এ সময় সেখানে থাকা কয়েকজনকে আমরা গিয়ে উদ্ধার করি।
আবুল কালাম নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌকাটি তলিয়ে যায়। আশপাশের কিছু লোককে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও বেশির ভাগ লোকজনই ডুবে যায়। নৌকায় অনেক বেশি যাত্রী থাকার কারণেই এমন দুর্ঘটনা। নৌকাটিতে ১০০-১২০ জন ছিলেন বলেও জানান তিনি।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মাহমুদুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। নৌকার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি লোক ছিল বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, মহালয়া পূজা উপলক্ষে রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদী নৌকা দিয়ে পার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাতে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপংকর রায়কে প্রধান করে একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে আরো তিন দিন সময় বাড়িয়ে নেন তদন্ত কমিটি।
এসআইএইচ