শান্ত নদীটি মুহূর্তেই হয়ে উঠল বিষাদের কারণ!
প্রায় পাঁচ যুগ ধরে করতোয়ার তীরেই আব্দুল লতিফের বসবাস। এমন লাশের মিছিল তিনি কখনো দেখেননি। গত ছয় দিনে অনেক টাই বদলেছে নদীর দুই তীরের চিত্র, শান্ত স্রোতের নদীটি হয়ে উঠেছে বিষাদের কারণ। স্বজনহারাদের কান্না যেন কিছুতেই থামছে না তবে স্বজন না হারিয়েও ভাসমান মরদেহ দেখে স্তব্ধ নদী তীরের মানুষ।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৌ-ডুবির ঘটনায় ষষ্ঠ দিনের মতো উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সকাল ৫টা থেকে পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুরের খানসামা পর্যন্ত নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।
এতে অংশ নিয়েছে দমকল সহ এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ। সবশেষ গত বুধবার বিকালে ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই উদ্ধার করা হয় ময়দানদিঘী ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামের বীরেন চন্দ্রের ছেলে হিমালয় (২৫) নামের একজনের মরদেহ। এ নিয়ে নৌ-ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর নিখোঁজ রয়েছেন আরো তিনজন।
ঘটনার দিন সকাল থেকেই ওই নদীতে মাছ শিকার করছিলেন গৌতম দাস। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ চিৎকারে পেছন ফিরতেই দেখেন নৌকাটি ডুবে যাচ্ছে। নিমিষেই নৌকার যাত্রীরা নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এ দৃশ্য যেন তিনি এখনো ভুলতে পারছেন না। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কয়েকজন পাথর উত্তোলনের শ্রমিক ছিলেন। তার মতে, তারা খুব ভালো সাঁতার জানতেন। কিন্তু তার পরও কীভাবে এসব শ্রমিক পানিতে ডুবে মারা গেলেন সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না গৌতম।
নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান পঞ্চগড় জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, পঞ্চগড় ও আশপাশের জেলার বারোটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট উদ্ধারকাজ করছে। এর বাইরে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহীর নয়জন ডুবুরি তিন দলে বিভক্ত হয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন।
উদ্ধারকাজে দায়িত্বরত পঞ্চগড় জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল ইসলাম জানান, আমাদের একটি মনিটরিং টিম সচেতন করার জন্য গত রবিবার সকাল থেকেই কর্মরত ছিল। তারা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় ওঠেন।
তিনি আরো জানান, এখানে ঘাট ইজারাদারদের কিছু শর্ত দেয়া হয়। যার মধ্যে যাত্রীবাহী নৌকায় যাত্রীদের বসার জন্য নির্ধারিত আসন রাখা, লাইফ জ্যাকেট ও এয়ার টিউবের ব্যবস্থা রাখা অন্যতম। তবে এসবের কিছুই এখানে মানা হয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর নিখোঁজ রয়েছেন পঞ্চগড়ের হাতিডুবা ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের মদনের ছেলে ভুপেন (৪০), উপজেলার সাকোয়া ডাঙ্গাপাড়ার খগেন্দ্র নাথ বর্মণের ছেলে সুরেন (৬৫) ও ঘাটিয়ার পাড়া গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথের মেয়ে জয়া রানী (৪)।
এএজেড