স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আউলিয়া ঘাটের বাতাস
দেবীগঞ্জ উপজেলার বোদা থানার ফুটকিবাড়ি আরাজি শিকারপুর গ্রামের একই পরিবারের আটজন মহালয়ার ধর্মসভায় যোগ দেওয়ার জন্য রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বদেশ্বরী মন্দিরের উদ্দেশে নৌকায় করে রওনা দেন। কিন্তু সেই উৎসবের ক্ষণে দেখা দিল বিষাদের ছায়া। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত লোক ওঠায় নৌকাটি পানিতে ডুবে ৩৩ জনের মৃত্যু ও অর্ধ শতাধিক নিখোঁজ হয়। এতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের ফুটকিবাড়ি আরাজি শিকারপুর গ্রামের বাংঠু রামের মেজো ছেলে হেমন্ত রায়ের স্ত্রী কবিতা (৪৫), তার মেয়ে কলি রায় শ্যামলী (১৪), ছোট ভাই বাসুদেব স্ত্রী রুপালী রানী (৩৫), হেমন্ত রায়ের নাতনী জয়া রানী (৭) জয়শ্রী (৩), আলো রানী (৩০) অর্পিতা রানী (১৭), বাসুদেবের মেয়ে নন্দনী (৮) সহ আটজন গেলেও তার মধ্যে অর্পিতা ও আলো সাতার কেটে ফিরে আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন নন্দনী আর কবিতা, শ্যামলী ও রুপালি রানীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকি ধীরেন রায়ের মেয়ে জয়শ্রী ও জয়া রানী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে ও দুই শিশু কন্যার নিখোঁজে পুরোগ্রাম জুড়ে শোকের মাতল। তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
স্ত্রী ও দুই নাতনীকে হারিয়ে পাগল প্রায় হেমন্ত রায়। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আমার স্ত্রী, তিন মেয়ে, দুই নাতনী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, কন্যা মহালয়া উপলক্ষে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভায় যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদী নৌকায় করে পার হওয়ার সময় নৌকা ডুবে ৩০ জন মারা যান। আমার পরিবারের আট জন্যই গভীর পানিতে তলিয়ে যায়। দুই মেয়ে সাঁতার কেটে ফিরে আসে। ছোট ভাইয়ের মেয়ে চিকিৎসাধীন, তিনজনের লাশ পেয়েছি আর দুইজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনা মেনে নেয়ার মতো না। আমার ফুটফুটে দুই নাতনীকে এখনো পাওয়া যায়নি। নাতনীকে উদ্ধারের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানান তিনি।
এলাকাবাসী জানায়, ওই নদীতে কোনো সেতু না থাকায় গতকাল দুপুরের দিকে ধর্মসভায় যোগ দিতে শতাধিক যাত্রী একটি মাত্র নৌকাযোগে করতোয়া নদী পার হচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়।
দেবীগঞ্জ উপজেলার ৬নং মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনশার মোঃ রেজাউল করিম শামীম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, একই পরিবারের ৮ জনের মধ্যে দুইজন ফিরে এসেছে। তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে ডুবুরি দল কাজ করছে। জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, নৌকাডুবি ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় রাতেই পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপংকর রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসআইএইচ