অপহরণের পর মুক্তিপণ: ডিবির ৭ সদস্যের ১২ বছর কারাদণ্ড
ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করার মামলায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ( ডিবি ) সাবেক ৭ সদস্যেকে ১২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দণ্ডিত আসামিদের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদয়ে আরো ২ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ( ২০ সেপ্টেম্বর ) কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-কক্সবাজার জেলা পুলিশের ডিবির সাবেক সদস্য এসআই মো. আবুল কালাম আজাদ, এসআই মো. মনিরুজ্জামান, এএসআই মো. গোলাম মোস্তফা, এএসআই মো. ফিরোজ, এএসআই আলাউদ্দিন, কনস্টেবল মোস্তফা আজম এবং কনস্টেবল আল আমিন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র পক্ষ আদালতে সাক্ষী, সকল তথ্য, উপাত্ত যথাসময়ে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। রাষ্ট্র পক্ষ আদালতে মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আদালত স্পর্শকাতর এ মামলাটি যথাযথ রায় ঘোষণা করতে পেরেছেন।
থানা পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার মৃত হোসেন আহমদের ছেলে মোঃ আবদুল গফুর ( ৩২ ) কে কক্সবাজার শহরের ‘আল গণি’ হোটেলের সামনে থেকে অপহরণ করে টেকনাফে নিয়ে যায় জেলা ডিবি পুলিশের ৭ সদস্য। পুলিশ সদস্যরা অপহৃত মো. আবদুল গফুরকে মারধর করে 'ক্রস ফায়ার' এ হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে মো. আবদুল গফুরের স্বজনরা ওই ডিবি পুলিশের সদস্যের ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে মো. আবদুল গফুরকে ছেড়ে দেয় তারা। পরে বিষয়টি মো. আব্দুল গফুরের স্বজনরা টেকনাফের লম্বরী সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে কর্মরত সেনা সদস্যদের জানায়। তাদেরকে জানানোর পর চেকপোস্টের সেনা সদস্যরা টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশ সদস্যদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি তল্লাশি করেন এবং নগদ ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করেন। এ সময় এসআই মোঃ মনিরুজ্জামান মাইক্রোবাস থেকে পালিয়ে গেলেও বাকী ৬ পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় মোঃ আবদুল গফুর বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর তাদের আসামি করে ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩৪ ধারায় টেকনাফ থানায় মামলা করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর ৩৮/২০১৭ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর ৭৮৯/২০১৭ ( টেকনাফ ) এবং এসটি মামলা নম্বর ১০২১/২০১৯ ইংরেজি। মামলা দায়েরের পর উল্লেখিত ৭ পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হয় ।
এরপরে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে ৭ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ৩ নভেম্বর মামলাটির চার্জ ( অভিযোগ ) গঠন করে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও মামলায় আসামিদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, যুক্তি-তর্কসহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩৪ ধারায় সাবেক ৭ পুলিশ সদস্যকে দোষী সাব্যস্থ করে উক্ত সাজা প্রদান করেন।
এসআইএইচ