এক পুকুরে ডুব দিয়ে আরেক পুকুরে ওঠেন দয়াল বাবা!
'এক পুকুরে ডুব ভেঙ্গে আরেক পুকুরে উঠেন দয়াল বাবা। বৃদ্ধকে যুবক, যুবককে বৃদ্ধ,কালোকে ফর্সাও করে দেন তিনি। কায়িক পরিশ্রম ছাড়াই শুধু মাত্র ধ্যানের মাধ্যমে কোটিপতিও করে দেন ওই ছদ্মবেশী পীর'-এসব কথার কোন প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এমন অবস্থায় সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই কথাগুলোকে নিছক গুজব দাবী পুলিশের। পাশাপাশি ওই বিষয়গুলেকে অস্বীকার করেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের কথিত ওই দয়াল বাবা।
গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই ব্যাক্তি সামান্য কবিরাজি চিকিৎসা করতেন মাত্র। ওই চিকিৎসাও বন্ধ করা হয়েছে। কথিত ওই দয়াল বাবার নাম শামীম। তিনি ওই গ্রামের আবু শামার ছেলে। সম্প্রতি কথিত ওই দয়াল বাবাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে। ওই দয়াল বাবা উত্তরদিক কেবলা করে এক সেজদায় নামায পড়াসহ অনেক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন কথা। এছাড়া নিজ বাড়িতে গড়ে ওঠা আস্তানা নিয়ে ওঠে নানা প্রশ্ন আর সমালোচনা। তিনি গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ঠকিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করে প্রতিদিন প্রচুর টাকা পঁয়সা লুটে নিচ্ছেন এমন দাবীও ওঠে।
সরেজমিনে জানা যায়, বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অদূরে একটি কবর রয়েছে যাকে অনেকেই মাজার বলে মনে করে। ওই কবরের পাশেই বাড়ি আবু শামার ছেলে শামীমের। স্থানীয়রা জানান, অনেক দিন থেকেই ওই ব্যাক্তি কবিরাজী চিকিৎসার পাশাপাশি ঝাড়-ফুক দেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আলাল উদ্দিন জানান,৭-৮ বছর থেকে ওই ব্যাক্তি কবিরাজী চিকিৎসা করেন। এর বাইরে ঝাড়-ফুক দেয়া ছাড়া আর কিছু করেন বলে তাদের,জানা নেই। প্রতি বৃহস্পতিবার এশার নামাযের পর থেকে তিনি ওই কবিরাজী চিকিৎসা,করেন। ওই চিকিৎসা নিতে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও রাজশাহী, বগুড়া থেকেও মানুষ আসে। রোগী আসলে ওই কবিরাজ উত্তরদিক হয়ে বসেন। আর দক্ষিণ দিক হয়ে ঝাড়-ফুক দেন। এছাড়া বছরে একবার মহরম মাসের ১০ তারিখে তার বাড়িতে ২ দিনব্যাপী ওরস হয়। ওই সময় ভক্ত বা রেগমুক্ত হওয়া ব্যাক্তিরা খাসি, মুরগি, চাল ইত্যাদি দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শামীম জানান, চলনবিলের তিশিখালী মাজারের ঘাসি দেওয়ান পীরের মাজারে ওই পীর ছাড়াও রয়েছে তার, শীষ্য তজু পীরের কবর। ওই তজু পীরের শিষ্য বা, মুরিদ হন তার, দাদা চান্দু সরদার। তার দাদার সাথে বাবা আবু শামাও মুরিদ হন। দাদার, মৃত্যুর পর বাড়ির সামনেই তাকে কবর দেয়া হয়েছে। ওই কবরকে তারা মাজার হিসাবে মানেন।
তিনি আরো দাবী করেন, প্রায় ৮ বছর আগে তিনি মানিকগঞ্জের বায়েশা পাগল বিন্দু শক্তির আস্তানায় গিয়ে মুরিদ হন। এরপর ওই গুরুর শেখানো পথে অসুস্থ্য মানুষদের চিকিৎসা দেন৷ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি যখন নামায পড়েন তখন পশ্চিম দিক হয়েই পড়েন৷ তবে চিকিৎসা শুরু করার আগে গুরুর নির্দেশমতো উত্তরদিক হয়ে আসন করে(বসে) গুরুকে স্মরণ করে মাটিতে একবার কপাল ঠেকিয়ে গুরুভক্তি করেন। এছাড়া,দক্ষিণ দিক হয়ে ঝাড়-ফুক দেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একপুকুরে ডুব ভেঙ্গে আরেক পুকুরে উঠা বা বৃদ্ধকে যুবক, যুবককে বৃদ্ধ করা, কিংবা কালোকে ফর্সা করে দেয়া অথবা কায়িক পরিশ্রম ছাড়াই শুধু মাত্র ধ্যানের মাধ্যমে কোটিপতি করে দেওয়ার কোন ক্ষমতা তার নেই। তিনি এমন কথা কাউকে বলেননি। তবে অনেকে উপকার পাওয়ার পর তার ছবি নিয়ে বাড়িতে ভক্তি করে এমন জেনেছেন। ওই কাজ করতেও তিনি কাউকে বলেননি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,তার চিকিৎসার জন্য কোন ফি তিনি নেননা। তবে অনেকে খুশি হয়ে টাকস দেন।তার চিকিৎসা নিতে হলে প্রত্যেককে আগরবাতি,মোমবাতি আর গোলাপজল নিয়ে আসতে হয়। আর রোগ সেরে গেলে তার বাড়িতে এসে সিন্নি বিলাতে হয়। ব্যাক্তি জীবনে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে সামিয়া আর বেবী শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে জামিলার বাবা তিনি-দাবী করে জানান,নিজ বাড়িতে বাবা-মা-স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে তিনি বসবাস করেন। তবে দূরের কোন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকতে চাইলে তিনি তাদের থাকার ব্যাবস্থা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুরুদাসপুর, থানার ওসি আব্দুল মতিন জানান,বিষয়টি জানার পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই এলাকার প্রায় ২শ,মানুষের সাথে কথা বলেছেন। ওই কবিরাজের ব্যাপারে যে কথাগুলো ছড়িয়েছে তা বিছক গুজব। মূলত ওই ব্যাক্তি কিছু কবিরাজী আর ঝাড়-ফুক দেন। নামায পড়ে বলে জানা যায়নি।বিশেষ করে প্যারালাইস্ড রোগীরা তার কাছে আসে। ওই চিকিৎসাও বন্ধ করা হয়েছে।
এএজেড