হাওর অঞ্চলে কারেন্ট জালের রমরমা ব্যবসা
নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল মোহনগঞ্জে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের রমরমা ব্যবসা করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। হাওর অঞ্চলের 'মৎস্য ভাণ্ডার' হিসেবে পরিচিত এই শহরের জাল-পট্টিতে রয়েছে এসব জালের বিশাল মার্কেট। এখান থেকেই প্রকাশ্যে খালিয়াজুরীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা সুনামগঞ্জ ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, তাহেরপুরে এসব জাল নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, তারা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
নিষিদ্ধ জাল বিক্রেতাদের রয়েছে কমিটি। কমিটির দুইজনের দায়িত্ব হলো ঝামেলার সবদিক সামাল দেওয়া। তবে জেলেদের অভিযোগ প্রশাসন শহরের মার্কেটে পাইকারি বিক্রেতা তাদের না ধরে, শুধু গরিব জেলেদের জাল পুড়িয়ে তাদের দায় শেষ করেন। এতে পেটের দায়ে ঋণ করে জাল কিনে মাছ বিক্রি করে পরিবার-পরিজন চালানো জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর মূল বিক্রেতারা রয়ে যাচ্ছেন আড়ালে।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মার্কেটে ছোট পাশের কারেন্ট জাল ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, মাঝারি পাশের কারেন্ট জাল বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি ধরে এবং বড় পাশের জাল বিক্রি হয় ১৭০০ টাকা কেজি ধরে। এ ছাড়া চায়না জাল, মশারি নেটসহ নানা ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এর মধ্যে মশারি নেট দিয়ে ছোট বড় সব ধরনের মাছ ধরা হয়। ছোট পোনা মাছ ধরতে এই জাল বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। মোহনগঞ্জ থেকে পাইকারি দরে কারেন্ট জাল নিয়ে ডিংগাপোতা হাওর পাড়ের জেলেদের কাছে বিক্রি করে।
জাল বিক্রি করেন এমন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, মোহনগঞ্জের জাল পট্টি থেকে জেলেদের চাহিদা অনুযায়ী কারেন্ট জাল, মশারি জালসহ অন্যান্য জাল কিনে নিয়ে বিক্রি করি স্থানীয় ছেলেদের কাছে। এ ছাড়া অনেক জেলে নিজেরা ও শহরের ওইসব দোকান থেকে জাল কিনেন। বর্ষার মৌসুমে কাজ না থাকায় এসব এলাকার কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে মশারি জাল মূলত একেবারে ছোট মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ডিঙ্গাপোতা হাওর পাড়ের জেলে রোকন উদ্দিন, ফজর রহমান, স্বাস্থ্য মিয়া, রফিকুল, রবিন জানান, গরিব জেলেরা সুদে টাকা এনে জাল কিনেন। মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবার চালান। কেউ কেউ গরু বাছুর বিক্রি করে জাল কিনেন। কিন্তু প্রশাসন মাঝে মধ্যে এসব গরিব ছেলেদের অবলম্বন পুড়িয়ে দেয়। এসব জাল মোহনগঞ্জ বাজার থেকে কিনেছেন। কিন্তু বাজারে দিন দুপুরে যারা এসব জাল বিক্রি করছে তাদের গুদামে হানা দেয় না কেউ। পাইকারি বাজার বন্ধ হলে তো জেলেরা কিনতে পারবে না আগে পাইকারি মার্কেট বন্ধ করার দাবি তাদের।
মোহনগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, মৎস্য সপ্তাহে হাওরে অভিযান চালিয়ে অনেক ধরনের অবৈধ জাল জব্দ করেছি। পাশাপাশি শহরের জাল মার্কেটে অভিযান চালিয়েছি। ওরা অনেক চালাক। উপস্থিতির টের পেয়ে একে অন্যকে ইশারা দিয়ে লুকিয়ে পড়ে। গুদাম কোথায় জানা যায় না। এবার অভিযানে একটা গুদাম পেয়েছি এর মালিক পাওয়া যায়নি।
মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, হাওরের পাশাপাশি শহরের দোকানগুলোতে অভিযান করেছি। দোকানে মূলত অবৈধ জালগুলো রাখে না। অন্য কোথাও লুকানো থাকে। দোকানগুলোই আগে বন্ধ করতে হবে। এখান থেকেই হাওর অঞ্চলের এসব জাল সরবরাহ হয় শুনেছি। এখন থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসএন