আড়াইশ বছরে হারিয়ে গেছে ৬০০ প্রজাতির গাছ
সম্প্রতি পরিচালিত এক সমন্বিত গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের ৩ লাখ ৮০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের ২০ ভাগ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। এছাড়া গত আড়াইশ বছরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির গাছ।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেশন (আইইউসিএন) এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৬০ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির ২৫ ভাগ আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ সংখ্যা একই সময়ে বিলুপ্তপাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপের মিলিত সংখ্যারও দ্বিগুণ।
ময়মনসিংহের জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ‘প্লান্ট কনজারভেশন অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস কিউ ও স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার তথ্য মতে, গত ২৫০ বছরে পৃথিবী থেকে ৫ শত ৭১ প্রজাতির উদ্ভিদ হারিয়ে গেছে। একই সময়ে পশু, পাখি ও সরীসৃপ মিলে বিলুপ্ত প্রজাতির সংখ্যা ২শ ১৭, যা ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ৫ শ ৭১টি উদ্ভিদের বিলুপ্তি হওয়াকে একটি সংখ্যা মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এর সঙ্গে পুরো পৃথিবীর অন্য প্রাণীগুলোও জড়িয়ে আছে বাস্তসংস্থানের জন্য। কারণ এখনও এই গাছগুলোই অক্সিজেন ও খাদ্যের যোগানদাতা। এগুলোই উদ্ভিদের বিলুপ্তি এবং অন্য প্রাণীর বিলুপ্তি ত্বরান্বিত হওয়ার কারণ। আর একটি প্রজাতির হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও হারিয়ে যায় ৩০ প্রজাতি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আজহারুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক আবু নুর মো. আনিসুল ইসলাম চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্লান্ট কনজারভেশন অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্লান্ট কিউরেশন ম্যানেজার সনজিত চন্দ্র বর্ম্মণ।
এ সময় কর্মসূচির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জুমে অংশগ্রহণ করেন ইন্দোনেশিয়া ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশন, ইন্দোনেশিয়ার প্রভাষক মুহাম্মদ হান্ডিগুনাওয়ান। অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা মো. রিশাদ আব্দুল্লাহ।
আয়োজকরা জানান, এ কর্মসূচীর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে একটি ছোট আকারে ঘন বন সৃষ্টি করা হবে। এ বনের বিশেষত্ব হলো, প্রচলিত বৃক্ষরোপণ পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি গাছ লাগানো হবে। গাছের বৃদ্ধি ১০ গুণ দ্রুত হবে এবং ফলস্বরূপ রোপণ ৩০ গুণ ঘন হবে। গাছের উচ্চতা প্রতি বছর কমপক্ষে ১ মিটার বৃদ্ধি হবে এবং তিন বছরের মধ্যে এটি সম্পূর্ণরূপে রক্ষণাবেক্ষণমুক্ত, বন্য এবং স্থানীয় টেকসই বন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
প্রসঙ্গত, বনায়ন কর্মসূচি পরিচালনার লক্ষ্যে একজন শিক্ষক ও ৩০ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে বিদ্যালয়ে একটি উদ্ভিদ সংরক্ষণ ক্লাব গঠন করেছেন তারা। এর ফলে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, প্রশাসকসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ বিভিন্ন সংরক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সক্রিয় সংরক্ষণকর্মী হিসেবে বিলুপ্তপ্রায় কিংবা হুমকির মুখে থাকা উদ্ভিদ প্রজাতিকে রক্ষা করবে বলেও জানান তারা।
একে/এএন