কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় হোটেল ম্যানেজার আটক
আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া।
কক্সবাজারে পর্যটক নারীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায়’ জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করেছেন র্যাব। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১৫-এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান।
মেহেদী হাসান বলেন, ‘জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার ছোটনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তিনি ঘটনার পর পলাতক ছিলেন। এই হোটেল থেকেই ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীরুল গিয়াস জানান, ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে হোটেলের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানায় র্যাব।
র্যাবের ভাষ্য, ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
র্যাব জানিয়েছে, আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। সে ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেন। এই মামলায় সে জেলে ছিল। চার মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা যায়। আশিক এলাকায় মাদক কারবার ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করে। জয়া তার অন্যতম সহযোগী।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ওই নারী মামলা করবেন। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বুধবার সকালে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে যান ওই নারী। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে।
র্যাব জানায়, বিকেলে তারা যান সৈকতের লাবণী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যান।
এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেন তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তারা তাকে ধর্ষণ করেন।
এরপর তারা ওই নারীকে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে তারা ইয়াবা সেবনের পর তাকে আবার ধর্ষণ করেন। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে তারা চলে যান।
জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন ওই নারী। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ।
ওই নারীর অভিযোগ, ‘৯৯৯-এ ফোন করার পর আমাকে ফোন দেয় কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা। তার নাম-পরিচয় না বললেও পুরো বিষয়টি আমি তাকে বলি। কিন্তু তিনি আমার কাছে না এসে উল্টো থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন। এক পর্যায়ে আমি হোটেলে-মোটেল জোনে বসানো সাইনবোর্ড থেকে র্যাবের নম্বর পাই। যোগাযোগ করা হলে তারা দ্রুত এগিয়ে আসেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে জরুরি সেবার ফোন দিলে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়ার কথা ছিল, সেটা আমি পাইনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীরুল গিয়াস বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।'
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এ সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম মাঠে থাকে। এমন তো হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
/এএন