সুদের জন্য বিক্রি করা সেই শিশু মায়ের কোলে, সুদ-কারবারি রিমান্ডে
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পাগলায় সুদের টাকা না পেয়ে সুদি কারবারি কর্তৃক বিক্রি করে দেওয়া সেই শিশুটি মায়ের কোলে ফিরেছে। এ ঘটনায় সুদের কারবারি নারী লাকী বেগমকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ মোহসেনের আদালত অভিযুক্ত লাকী বেগমের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় রবিবার (১৭ এপ্রিল) শিশুটির মা রানী বেগম বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সুদের কারবারি লাকী বেগম, তার স্বামী হযরত আলী এবং শিশুটিকে কিনে নেওয়া নারী রানু বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
রবিবারই মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে বিক্রি করে দেওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। পরে সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর এলাকা থেকে লাকী বেগমকে গ্রেপ্তার করে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান বলেন, লাকী বেগমের কাছ থেকে রানী বেগমের স্বামী হযরত আলী কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের টাকা শোধ করতে রানী বেগমকে লাকীর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এর মধ্যে গত বছর রানী সন্তান প্রসব করলে সুদের টাকার জন্য লাকী বেগম রানীকে না জানিয়েই তার এক দিন বয়সী সন্তানকে বিক্রি করে দেন। তার পর থেকে রানী বেগমকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়।
এক বছর পর সুযোগ পেয়ে রানী ফতুল্লা মডেল থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ সুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে। সোমবার সকালে মামলার প্রধান আসামি লাকীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, রবিবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে ফতুল্লা থানায় শিশুটিকে তার মা রীনা বেগমের কাছে তুলে দিতে গেলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিশুটিকে কিনে নেওয়া রানু বেগম বুক চাপড়ে বিলাপ করতে থাকেন। এক বছর ধরে সন্তানের স্নেহে বড় করা শিশুটিকে কোন উপায়ে তার কাছে রাখা যাবে, তা জানতে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। অপরদিকে, নিজের সন্তানকে কাছে ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রানীও।
এ বিষয়ে রানু বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের মা তিনি। তার ১০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি একটি সন্তান দত্তক নিতে চাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে করোনা মহামারির সময় জানতে পারেন, অভাবের কারণে একটি ছেলেশিশুকে বিক্রি করে দেওয়া হবে। তিনি তাৎক্ষণিক ৭৫ হাজার টাকায় শিশুটিকে কিনে নেন। নাম রাখেন মো. ইউসুফ।
কিন্তু রবিবার রাতে হঠাৎ তার বাড়িতে পুলিশ হাজির হলে তিনি জানতে পারেন, শিশুটিকে চুরি করে এনে বিক্রি করা হয়েছিল। কথাগুলো বলতে বলতে মাথা চেপে ধরে থানার মেঝেতে বসে পড়েন রানু।
এদিকে, দীর্ঘদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে খুশি রানী বেগম। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তার বিশ্বাস ছিল, একদিন ছেলেকে ফিরে পাবেন। জন্মের আগে ছেলের নাম ঠিক করেছিলেন ‘রানা’। এখন যেহেতু ইউসুফ নাম রাখা হয়েছে, ছেলেকে এ নামেই ডাকবেন তিনি।
এমএসপি