নলছিটি পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্প
সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মেয়রের বিরুদ্ধে
ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া সরকারি অর্থ আত্মসোতের অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র মো. ওয়াহেদ কবির খানের বিরুদ্ধে। উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও দলের মনোনয়নে মেয়র হওয়ার পর তিনি পৌরসভার সাবেক সচিব, প্রকৌশলীসহ কতিপয় কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেও শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে অর্থ লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
পৌরসভার ছয়জন কাউন্সিলর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পৌর মেয়র ওয়াহেদ কবির খান ক্ষমতার এক বছরে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মেয়রের এমন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় রাজনীতির অভিভাবক আমির হোসেন আমুর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে ও ছয়জন কাউন্সিলরের অভিযোগে জানা গেছে, মেয়র মো. ওয়াহেদ কবির খান সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ৪৩ লাখ টাকা ব্যাংক তহবিল থেকে উত্তোলন করলেও, তা কোন খাতে খরচ করেছেন তার কোনো হিসাব দেখাতে পারেননি। নগর উন্নয়ন প্রকল্পে সাতটি রাস্তা নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও তিনটি রাস্তার মাত্র ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাকি চারটি রাস্তার আদৌ কোনো কাজ না করে শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। জলবায়ু প্রকল্পে বরাদ্দ ২ কোটি টাকার অনুকূলে ১৫০টি স্ট্রিট লাইট ও ৫০টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে মাত্র আটটি গভীর নলকূপ ও ১৫টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করে বরাদ্দ দেওয়া সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে মেয়র অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে নলছিটি পৌরসভার কাউন্সিলর পলাশ তালুকদার, তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী, ফিরোজ আলম খান, রেজাউল চৌধুরী, দিলরুবা বেগম ও শহিদুল ইসলাম টিটু উল্লেখিত অভিযোগ করেন।
এর আগে নলছিটি পৌরসভার নাগরিক সাইদুর রহমান লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, নলছিটি পৌরসভায় ২০২০-২১ অর্থ বছরের বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু নিধনের জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, আয়লায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, করোনার প্রথম দফায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের জন্য দুই কিস্তিতে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার কোনো কাজ না করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ ৯টি প্রকল্পে ২৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন সহায়তায় থোক বরাদ্দ ২৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা, পৌরসভার বিশেষ বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা ও নগর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে ভূয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মর্মে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন ১২টি দপ্তরে অভিযোগ করেছেন পৌরবাসী সাইদুর রহমান।
তবে মেয়রপন্থি কাউন্সিলরের দাবি, মাত্র এক বছর দায়িত্ব পালনকারী পৌরমেয়র মো. ওয়াহেদ কবির খানকে বিতর্কিত করে ফায়দা লুটতেই একটি চক্র কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি-লুটপাটের কাহিনী রটনা করছে। তাদের উদ্দেশ্য নাগরিক সেবা নয়, দুর্নীতির ধুয়া তুলে নলছিটি পৌরসভার কার্যক্রমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা।
এ বিষয়ে পৌরসভার টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক ও ১ নম্বর প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার বলেন, কাগজ-কলমে আমি টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক হওয়া সত্বেও মেয়র মো. ওয়াহেদ কবির খান ‘টেন্ডার কমিটি’র সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই গোপনে সব টেন্ডার সম্পন্ন করে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করেছেন।
তিনি বলেন, আমি এসব কাজের জিওপত্র ও পৌরসভার ব্যাংক হিসাব বিবরণী উত্তোলন করে দেখতে পাই, কাজ না করেই বরাদ্দ দেওয়া সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মেয়র। এসব বিষয় নিয়ে আমরা টেন্ডার কমিটিসহ অধিকাংশ কাউন্সিলরা মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করলেও সব সময়ই মেয়র অসুস্থতার বাহানা করে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে নলছিটি পৌরসভার মেয়র মো. ওয়াহেদ কবির খানের বক্তব্য নিতে দুই দিন ধরে পৌরসভা কার্যালয়ে ও তার বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, কিছু কাউন্সিলর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেছে। তাদের স্বার্থের জন্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
এসএন