ছেলের সঙ্গে ৫ম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে, সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত
নিজের স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নিজের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ায় সেই স্কুলশিক্ষিকা বরখাস্ত হয়েছেন। বরখাস্ত শিক্ষিকার নাম শামসুন নাহার।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে অসদাচরণের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়।
নিজের স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নিজের ছেলের বিয়ে দেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন নাহার। যা নিয়ে এলাকায় আলোচনা- সমালোচনার ঝড় ওঠে। একজন শিক্ষিকার এমন কর্মকাণ্ডে অবাক হয়েছেন সচেতন মানুষ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের বিলপাড়ার দিনমুজুর অসোক আলীর মেয়ে শারমীন খাতুন (১১)। সে পার্শ্ববর্তী বেগমপুর ইউনিয়নের বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্রী। তার রোল নং-৩৮। গত ২০ মার্চ একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন নাহার তারই ছেলে স্থানীয় বেগমপুর যদুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণি পড়ুয়া আব্দুর রহমানের সঙ্গে শারমীনের বিয়ে দেন।
প্রথম কয়েকদিন বিষয়টি জানাজানি না হলেও শিশু বর-কনের শ্বশুরবাড়ি ছোটশলুয়া গ্রামে দশ বদ্দনে (বিয়ের পর ১০ দিন শ্বশুর বাড়িতে কাটানো) গেলে শিক্ষিকার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের সঙ্গে নিজ বিদ্যালয়ের অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি লোকমুখে প্রচার হয়।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাল্যবিয়ের বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছি। শিক্ষিকা নিজেও তার অপরাধ স্বীকার করেছেন। অসদাচরণের জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূঁইয়া বলেন, “অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। যারা সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। যার দায়িত্ব ছিল বাল্যবিয়ে বন্ধের, তিনি তা না করে উল্টো বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন।”
গত রবিবার (২৭ মার্চ) বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, হাতে মেহেদীর রং নিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ক্লাস করছে বাল্যবিয়ে শিকার স্কুলছাত্রী শারমিন খাতুন।
বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে অপকটে স্বীকার করে। এ সময় সে বলে, “এক সপ্তাহ আগে ম্যাডামের ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে।”
একই ক্লাসে শ্রেণিশিক্ষক হিসেবে তখন ক্লাস নিচ্ছিল অভিযুক্ত শিক্ষিকা শামসুন নাহার।
সাংবাদিক পরিচয়ে তার কাছে ওই বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার নিজ বাড়ির অবস্থা খুব ভালো নয়। বিশেষ করে আমার মায়ের খুব শরীর খারাপ। মৃত্যুর আগে নাতবউ দেখে যাওয়ার খুব ইচ্ছা মায়ের। মূলত তার ইচ্ছা পূরণ করা জন্যই ছেলের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে দেই। তবে এ বিয়ের রেজিস্ট্রি করা হয়নি।”
বেগমপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও বেগমপুর ইউনিয়নের কাজী মফিজুল ইসলাম ধর্মীয় রীতি মেনে এ বিয়ে পড়িয়েছেন।
এমএসপি