শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি
মায়ের কাছে ফেরা হলো না ২ বোনের
মুন্সিগঞ্জ থেকে ছোট বোন আরোহী বর্মণকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার একরামপুর মাসির বাসায় বেড়াতে যান স্মৃতি বর্মণ। ২ বোন মাকে বলেছিল, ২ দিন পরে তারা বাড়িতে ফিরবে। কিন্তু, দোল উৎসব শেষে বাড়ি ফেরা হলো না তাদের। লঞ্চডুবিতে স্মৃতির মৃত্যু হয়েছে এবং আরোহী বর্মণ এখনো নিখোঁজ।
রবিবার শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী ছিল ২ বোন।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুর থেকে আরোহীর খোঁজে নৌকা নিয়ে শীতলক্ষ্যার দুই তীরে ঘুরেছেন মাসি শিপ্রা বর্মণ।
এ সময় তিনি বিলাপ করছিলেন, 'কেন একা যেতে দিলাম। কাউরে সঙ্গে দিলেই বাঁইচা যাইতো ২ বোন। স্মৃতিতো জীবিতই ছিল। কেউ নাই, তাই ডাক্তারও দেখে নাই। হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। ছোট বোনটারেও পাচ্ছি না। আমার বোন এখন কী নিয়ে বাঁচব।'
শিপ্রা বর্মণের স্বামী রিপন বর্মণ গণমাধ্যমকে বলেন, 'দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ২ বোন আমার বাসায় বেড়াতে এসেছিল। এভাবে তারা মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় ঘুরতে আসত। আবার চলেও যেত। এবার দোল পূর্ণিমা শেষে রোববার দুপুরে লঞ্চে মুন্সিগঞ্জের পথে রওনা দেয়। কিন্তু, বিকাল ৫টায় ওদের বাবা ফোন দিয়ে বলে স্মৃতি ও আরোহী বাসায় ফেরেনি। তখনই তাদের মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাই। পরে খবরের মাধ্যমে জানতে পারি লঞ্চ ডুবে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে এখানে এসে (কয়লাঘাট) সবাইকে ২ বোনের ছবি দেখিয়ে খোঁজ করতে থাকি। তখনই একজন জানায় স্মৃতিকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'হাসপাতালে নিয়ে গেছে শুনে মনটা একটু শান্ত হয় যে, বেঁচে আছে। কিন্তু, কী অভাগা কপাল! সেখানে গিয়ে দেখি স্মৃতি আর চোখ খুলছে না। ওদের বাবা-মা ২ জনই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফোন দিয়ে কিছু বলতেও পারছি না। কী বলে তাদের সান্ত্বনা দিমু?'
রিপন বর্মণ বলেন, 'স্মৃতির মরদেহ বাড়িতে নিয়ে শেষকৃত্য করা হয়েছে। এখন ছোট বোনের খোঁজে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। জীবিত তো পারলাম না, মরদেহটা অন্তত তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।'
প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুর সোয়া ২টায় সদর উপজেলার কয়লাঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে 'এমভি রূপসী-৯' নামে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় 'এমএল আফসার উদ্দিন' যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে, এখনো ৪ জন নিখোঁজ আছেন।
এমএসপি