সাত বছরেও জমি বুঝে পাননি কুমিল্লার দুই বীরাঙ্গনা
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন লাকসাম উপজেলায় দুই বীরাঙ্গনাকে সাত বছর আগে খাস জমি দিলেও তা বুঝে পাননি তারা।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে জেলার লাকসামের দুই বীরাঙ্গনা ফাতেমা বেগম ও মোসা. নূর বানু এ অভিযোগ করেন।
উপজেলার পাইকপাড়া এলাকার মৃত আরব আলীর স্ত্রী বীরাঙ্গনা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘কুমিল্লার ডিসি সাব কেন আমাগো সাথে তামাশা করল। ৭১-এ পাকিস্তানিরা নির্যাতন করেছে। মনে করছি আর মনে হয় বাঁচব না। কিন্তু এখনো আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখছেন। আপনি আমাদের জন্য বই লেখার পর মানুষ আমাকে সম্মান করে এখন। কিন্তু কুমিল্লার ডিসি সাব যে জায়গা আমাদের দিয়েছে এটা নাকি অন্য মানুষের জায়গা। এ ব্যাপারে আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাই ইউএনও’র কাছে গিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পারলে ডিসি সাবকে বলবেন, গরিব বীরাঙ্গনার সাথে এমন করা ঠিক হয়নি।’
বীরাঙ্গনা ফাতেমা বেগমের বড় মেয়ে খুরশিদা বেগম বলেন, স্যার, আমার কোনো ভাই নেই, বাবাও বেঁচে নেই। সারা দিন শুনি সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের জন্য এই করে, সেই করে। কিন্তু আমার মা তো তিন বেলা খাইতেও পারে না। ডিসি কল্লোল স্যার থাকতে আমাদের খাস জমি দিয়েছিলেন। আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। আমরা দখল করতে গেলে অন্য মানুষ বাধা দেয়। বলে এ জমি না কী তাদের। কয়েকবার এ বিষয়ে ইউএনও অফিসে গিয়েছিলাম। ইউএনও স্যার আজ যাইব কাল যাইব করে। আর যায় না। ভাবলাম,এটা বড়লোক অফিসারদের গরিবের সাথে তামাশা। এরপর আর যাইনি।’
একই উপজেলার নশরতপুর এলাকার মৃত বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী বীরাঙ্গনা মোসা. নুর বানুও ফাতেমা বেগমের মতো প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার ডিসি আমাদের যে জমি দিয়েছে সেই জমিএখনো পাইনি। এটি একটি ডোবা। স্যারেরা বলছিলেন, মাটির ভরাট করে ঘর তুলে দেবেন। কিন্তু সাত বছরেও কোনো খবর নেই। এখন আমার পোলা আর সেই ডোবার কাছে যায় না।’
বীরাঙ্গনা নুর বানুর ছেলে মো. কামাল হোসেন দুঃখ করে বলেন, ‘আমার মা তো কুমিল্লার ডিসির কাছে জমি চায়নি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে মায়ের অবদান ও আমরা গরিব বলে খাস জমি দিলেন। কিন্তু এমন এক জায়গায় দিলেন, যেখানে সারা বছর পানি থাকে। তাহলে আমাদের কী লাভ হলো। আমরা দুই বছর আগেও ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করছিলাম। কইছিলাম মাটি ভরাট করে ঘর করে দেবে। আর দেয়নি। দুঃখ করে এখন আর যাই না। আমি একজন গাড়িচালক। কষ্ট করে চলি। আজ পর্যন্ত কেউ আমার মাকে কোনো সাহায্য করেনি।’
দুই বীরাঙ্গনাই তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, এটি অত্যান্ত দুঃখজনক ঘটনা। অনেকের সমস্যা হয়েছিল আমি ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করে দিয়েছি। এরা তো আমার কাছে কখনো আসেনি। এখন যেহেতু আপনি বলেছেন তাহলে খবর নিয়ে যাতে তারা দ্রুত জমি পায় সেই ব্যবস্থা করব।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। এই মাত্র শুনলাম। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সাবেক ডিসি) হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, আমি যখন কুমিল্লার ডিসি ছিলাম তখন আমি বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করেছি। তাদের খাস জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য। এরপর তো আমি চলে এলাম। এখন যেহেতু আপনার কাছ থেকে শুনলাম তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাননি বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। প্রয়োজনে আমি ডিসি সাহেবকেও ফোন করব যাতে তারা তাদের জমিগুলো দ্রুত বুঝে পান।
এসএন