জলকেলি উৎসবে মুছে যাবে গ্লানি-অসঙ্গতি, শেষ কাল
বরগুনার তালতলীতে শুরু হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বৃহত্তম উৎসব সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি। এ উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পল্লীগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা। সোমবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে এই উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা। বুধবার (১৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠান শেষ হবে।
প্রতি বছর রাখাইন নববর্ষকে বরণ করতে সংশ্লিষ্ট রাখাইন সম্প্রদায় সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি উৎসব উদযাপন করেন। এ উৎসবে রাখাইন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধরাও নেচে-গেয়ে একে অপকে শরীরে পানি ছিটিয়ে উৎসব পালন করে। এ সময় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দল বেঁধে নাচতে নাচতে বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শন করা হয়।
রাখাইন নেতা মংসেলেন তালুকদার বলেন, উৎসব উপলক্ষে প্রতিটি রাখাইন পল্লী থেকে আবাল-বৃদ্ধ বনিতা শোভাযাত্রা সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। এতে অল্প-বয়সীরা মাটির কলস এবং বয়স্করা কল্পতরু বহন করেন। এরপর সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর্ব শেষ করেন। বিকালে তরুণ-তরুণীরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ান জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে।
তিনি আরও বলেন, নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। তারা নাচে-গানে মেতে উঠে একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন মঙ্গল জল। রাখাইনদের বিশ্বাস, এই মঙ্গল জল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের সকল গ্লানি, ব্যথা, বেদনা, অপ্রাপ্তি সহ নানা অসঙ্গতি।
রাখাইন তরুণী সোসো এন লু রাখাইন বলেন, জলে স্নিগ্ধ হওয়ার অন্যরকম প্রয়াস এটি। এ উৎসব কোনও ধর্মীয় রীতির ভিত্তিতে নয়। সামাজিক রীতিমতে রাখাইন নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে রাখাইনরা একে-অপরকে পানি ছোড়ার খেলায় মেতে উঠেছে। তার পরও নতুন বছর যেন ভালো কাটে এজন্য আয়োজন করা হয় নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের।
জলকেলি উৎসব আয়োজন কমিটির সভাপতি রাখাইন নেতা তেং মং থে বলেন, আমরা প্রতি বছরই এখানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই উৎসব উদযাপন করে থাকি। রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনসহ স্থানীয়রাও এসে এই উৎসবটিকে আরও প্রাণবন্ত করেছেন। উৎসব আয়োজনে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এএজেড