দৌলতখান জেলেদের চালের রিজার্ভ সংকট
শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে ভোলার মাছঘাট গুলোতে। ভোলার ৯০- ৯৫% জেলেরাই চলমান নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে বলে জানান জেলা মৎস অধিদপ্তর। তবে চরফ্যাশন উপজেলায় জেলের চাল বিতরণ সম্পর্ন হলেও দৌলত খাঁন উপজেলায় চাল না থাকার কারণে চাল বিতরন করা আড়ম্ব করতে পারছেন না বলে জানান জেলা মৎস অধিদপ্তর। তবে রিজার্ভ সংকটের জানতে ভারপ্রাপ্ত ভোলা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সন্দীপ কুমার কর রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পেশ করা যায়নি। তবে ভোলা জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক শাহিদা আক্তার বলেন দৌলত খানে জেলেদের চালের রিজার্ভ সংকট আছে কিনা আমার জানা নেই। তিনি বর্তমানে অফিসের বাহিরে রয়েছেন বলেও জানান।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ১লা মার্চ থেকে বেকারত্ব দিন কাটছে উপকুলীয় জেলে ও মৎস ঘাটে। নদীতে মাছ শিকারে চলছে নিষেধাজ্ঞা। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর জেলেরা ও মৎস ব্যাবসায়ীরা। যার জন্য জেলার একলক্ষ আটান্ন হাজার জেলের ৫ থেকে ১০% জেলেরা এখন সংসার চালানো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায়। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে ১লা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসের জন্য সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে।
এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে গত ১লা মার্চ (বুধবার) থেকে, ৩০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাত ১২ টা পর্যন্ত চলবে নিষেধাজ্ঞা। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করা বন্ধের আওতায় ১৯০ কিলোমিটার নদী পথ। জেলা মৎস অফিসার মোল্লা এমদাদুল্লা ঢাকা প্রকাশকে বলেন জেলায় নিবন্ধিত জেলেদের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্ধ রয়েছে।
জেলার হাকিমুদ্ধি, দৌলতখা, তুলাতলি, ইলিশা সহ বড়বড় মৎস্যঘাট ঘুরে দেখা যায়, কেবল মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এবং বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় বেকার সময় পার করছেন জেলেরা। এতে করে সংসার চালাতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। মহাজনদের দাদন ও এনজিওর ঋণের চাপও রয়েছে জেলেদের উপর। তবে এনজিওর ঋনের কিস্তি পরিশোধের চিন্তায় জেলেদের হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে জানান জেলে জাহিরুল ইসলাম।
জেলে সাদেক বলেন, আমরা মৎস অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছি সরকার আমাদের চাউলের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে আমরা চাউল পেয়েছি এখন আমরা মাছ শিকারে যাইনা, তাই বেকার সময়ে মাছ ধরার জাল সেলাইয়ের কাজ করি। জেলে হারেছ মাঝি বলেন আমি এবং আমার জেলেরা এখন আমাদের মাছ ধরার ট্রলার মেরামত করছি। তুলাতলি ঘাটের জেলে দুলাল বলেন আমরা এখন বেকার না থেকে তরকারি খেতে কাজ করছি,নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে মাছ ধরার কাজে ফিরে যাবো।
ইলিশা ঘাটের জেলে হেজু বলেন, আমার ছোট সংসারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে, তারা অন্য মাজির সঙ্গে মাছ শিকার করতো নিষেধাজ্ঞার কারনে এখন তরকারি খেতে কাজ করেন। তরকারি খেতে দিন মজুরের কাজ করে আমাদের যা আয় হয় তা দিয়েই ভালোভাবে চলে সংসার। তবে গত কয়েকদিন আগ থেকে নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যার ফলে অনেক জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য সরকারিভাবে যে চাল বরাদ্দ রয়েছে তা কিছুকিছু জেলেরা এখনো পাননি বলেও জানা গেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ওই চাল বিতরণ করা হয়, এমন দাবি করেছেন সাধারণ জেলেরা। অপরদিকে জেলেদের দাবি এনজিওর কিস্তি পরিশোধ এ দুই মাস বন্ধ থাকলে ভালো হতো।
এদিকে জেলা মৎস অধিদপ্তর জানিয়েছে, এনজিও জেলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইতিমধ্যে মাননীয় জেলা প্রশাসক মহদয়ের সঙ্গে একটি মিটিং হয়েছে। মিটিংএ নিষেধাজ্ঞা চলমান সময়ে জেলেদের থেকে চাপ দিয়ে কিস্তি আদায় না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারপরও কোনো এনজিওকে যদি কিস্তির টাকা জেলেরা স্বেচ্ছায় প্রদান করে তা গ্রহণ করবে এনজিওকর্মী।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে, ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার ও ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর অন্তত ১০০ কিলোমিটার এলাকা। নিষেধাজ্ঞা আওতাধীন নদী এলাকায় ভোলার সাতটি উপজেলায় ১৫৮০০০ নিবন্ধিত জেলে থাকলেও ৮৯৪১০ জন জেলের মধ্যে চাউল বিতরন করা হবে বলে জানান ভোলা জেলা মৎস অধিদপ্তর।
ইতিমধ্যে চাল বিতরন শুরু করে চরফ্যাশন উপজেলা চাল প্রথম ধাপে বিতরন সম্পন্ন করেছে। দৌলতখান উপজেলা চাউলের রিজার্ভ না থাকায় একটু বিলম্ব হলেও বাকী সকল উপজেলায় চাল বিতরনের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞায় ৮ই মার্চ পর্যন্ত ৩৭ জেলে বিভিন্ন হারে জরিমানা করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লা। তবে এবছর ৯৫% জেলে স্বেচ্ছায় মৎস অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
এএজেড