কুয়াকাটার বিষমুক্ত শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শুধু লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় শুঁটকি। আর সমুদ্রপাড়ে খোলা আকাশের নিচে কেবল রোদের আলো এবং বাতাসের সাহায্যে কাঁচা মাছ শুকিয়ে বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। আর উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুঁটকি কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন শুঁটকিপ্রেমীরা।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রাকৃতিকভাবে দর্শনার্থীদের কাছে বিখ্যাত হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যটকদের কাছে সুনাম কুড়াচ্ছে কুয়াকাটার বিষমুক্ত শুঁটকি। যা এরমধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকি এখন অন্যতম।
তবে শুঁটকি উৎপাদনে সরকারি বা বেসরকারিভাবে নির্দিষ্ট কোনো পল্লি না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট অস্থায়ীভাবে প্রক্রিয়াজাত করছেন উৎপাদনকারীরা।
দেখা যায়, চলতি মৌসুমেও ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় লেবুর বনসহ সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুকানো হচ্ছে শুঁটকি। তবে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই শুধু লবণ মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের শুঁটকি মাছ।
শুঁটকি পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, পোয়া শুঁটকি, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্ট্যা, চিংড়ি, ছুরি,
হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির শুঁটকি মাছ। ফলে প্রতিনিয়ত শুঁটকি পল্লিতে পছন্দের শুঁটকি সংগ্রহে ভিড় জমান পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক ইমাম উদ্দিন বলেন, আমরা শুঁটকিপ্রেমী মানুষ, দেশের বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি খেয়েছি। কিন্তু কুয়াকাটার
শুঁটকির কথা শুনে এখানে এসেছি। ভ্রমণ শেষে বেশকিছু শুঁটকি নিয়েছি। এক কথায় অসাধারণ শুঁটকি।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক আবদুল কাইউম জানান, আমার স্ত্রী খুব শুঁটকি পছন্দ করে তাই তার জান্য বেশ কয়েক ধরনের শুঁটকি ক্রয় করলাম। সারাদেশের মধ্যে কুয়াকাটার শুঁটকি বেস্ট।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আনিস-নাজমা দম্পতি জানান, বহুদিন ধরে অফিস কলিগদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনেছি। তাই কুয়াকাটায় এসেছি। এসে দেখলাম আসলেই প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তাই লইট্ট্যাসহ কয়েক ধরনের শুঁটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি স্বজনদের গিফট করব।
লেবুর বন এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী হানিফ জানান, সৈকতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শুঁটকি মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। প্রতি বছরই তাদের বিভিন্ন কারণে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় লোকসানও গুণতে হচ্ছে তাদের।
তিনি আরও বলেন, দোকানিদের চাহিদানুযায়ী মাছ শুকাতে পারি না। আর দোকানিরাও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারে না।
কুয়াকাটার একাধিক শুঁটকি দোকানিরা জানান, যারা শুঁটকি তৈরি করে তাদের বার বার স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অনেক সময়ই পছন্দের শুঁটকির অভাবে ক্রেতাদের শুঁটকি দেওয়া যায় না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে একটি স্থায়ী পল্লি নির্ধারণের দাবি সংশ্লিষ্ট সবার।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, স্থায়ী শুঁটকি পল্লি নির্মাণের লক্ষ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এসএন