ত্যাগীরা চাচ্ছেন পরিবর্তন, বর্তমান নেতৃত্বের আস্থা কেন্দ্রের উপর
দীর্ঘ ৮ বছর পর বুধবার (১৬ নভেম্বর) বরগুনা সার্কিট হাউস ময়দানে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিকি সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা সম্মেলন স্থলে জমায়েত হতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা পৌঁছালেই শুরু হবে সম্মেলন।
এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কারণ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দলের শীর্ষ পদে নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসলেও এবারের সম্মেলনে পরিবর্তন আসবে। নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা, ত্যাগী পরীক্ষিত ও যোগ্যদের কাছে দেওয়া হবে নেতৃত্ব। এ জন্য শীর্ষ পদ প্রত্যাশীদের অনেকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ ও জোর লবিং করেছেন। তবে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের ভরসা কেন্দ্রীয় নেতারাই একমাত্র।
জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তৎকালীন বরগুনা-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবির।
এরপর দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে শীর্ষ এই দুটি পদে সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে এই দুইজনই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সবেশষ ২০১৪ সালের নভেম্বরে বরগুনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর যথারীতি অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর কবিরকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিন বছরের সেই কমিটি পার করেছে আট বছর।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বরগুনা-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এখনও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য। সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ্ব জাহাঙ্গীর কবীর এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি জেলা পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ চাইবেন। এর মধ্যে সভপতি প্রার্থী হতে চান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব মৃধা, সাবেক পৌর মেয়র অ্যাড. মো. শাহজাহান মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হুমায়ুন কবীর।
এ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন মন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনার পৌর মেয়র অ্যাড. কামরুল আহসান মহরাজ, জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরওয়ার টুকু, বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলামসহ আরও অনেকে সাধারণ সম্পাদক পদ চাইবেন।
দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা মনে করছেন, দলীয় কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল করতে নেতৃত্বে পরিবর্তন দরকার। এতে দল যেমন শক্তিশালী হবে তেমনি সংসদ নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোতালেব মৃধা।
মোতালেব মৃধা বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দলের শীর্ষ দুটি পদে একই ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আমরাও তো রাজনীতি করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছি। আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। এরপর দলের হয়ে লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল জুলুমের শিকার হয়েছি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম প্রতিবাদকারীদের মধ্যে আমার অন্যতম ভূমিকা ছিল। দল এখনও যদি আমাদের ত্যাগের মূল্যায়ন না করে তবে কিছু করার নেই।
তিনি আরও বলেন, উনি (বর্তামান সভাপতি) তো সবই পেয়েছেন। এখন স্বেচ্ছায় তার দলের পদ ছেড়ে অন্যদের জায়গা করে দেওয়া উচিত।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমাদের জ্যেষ্ঠ নেতারা দল পরিচালনা করে আসছেন। তাদের উচিত এখন দলের হয়ে আমরা যারা দীর্ঘ বছর কাজ করছি আমাদের সুযোগ করে দেওয়া। আমি আশা করি বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারা বিবেচনায় রাখবেন।
অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, দলের প্রয়োজনে যদি হাউজ আমাকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী করতে চায়। তবে আমি প্রার্থী হবো।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আমি দীর্ঘ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। কেন্দ্র যদি মনে করে আমাকে আবার দায়িত্ব দেবে।
এদিকে সম্মেলনে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের উপরই আস্থা রাখছেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি।
তিনি বলেন, আমি সেই ১৯৮৭ সাল থেকে দলের নেতৃত্বে আছি। কখনো সভাপতি কখনো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। এবার আমি বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হতে চাইনা। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই এখানে চূড়ান্ত। তবে অবশ্যই পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে।
এসআইএইচ