পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সোনারচর ও জাহাজমারা
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় নানা সৌন্দর্যে ঘেরা আকর্ষণীয় সোনারচর ও জাহাজমারার দৃশ্য সৌন্দর্য্য পিপাসু পর্যটকদের মনকে নিশ্চয়ই আকৃষ্ট করবে। তবে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পিছিয়ে রয়েছে এই দুটি দর্শনীয় স্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এখানে পর্যটনের ব্যাপক বিকাশ ঘটবে। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থারও আমূল পরিবর্তন হবে।
সোনারচর বঙ্গোপসাগরের কোলজুড়ে বেড়ে ওঠা সৌন্দর্যের লীলাভূমি। উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বি এই দ্বীপটি দূর থেকে দেখতে অনেকটা ডিমের মতো। সকাল কিংবা শেষ বিকেলের রোদের আলো যখন বেলাভূমিতে পড়ে তখন দূর থেকে পুরো দ্বীপটাকে সোনালি রঙের থালার মতো মনে হয়। বালুর উপরে সূর্যের আলো পড়লে চিকচিক করতে থাকে। মনে হবে যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে দ্বীপটিতে। ধারণা করা হয়, বিশেষ এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই দ্বীপটির নাম সোনারচর রাখা হয়েছে। সমুদ্রের যেকোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে আরও জানা গেছে, অসংখ্য হরিণ আর বানর রয়েছে সোনারচরে। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে পাঁচ হাজার একরের বিশাল বনভূমি। বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে সহজেই চোখ পড়বে বুনো মোষ, শুকর, বানর, মেছো বাঘসহ আরও সব বন্য প্রাণি। দেখা যায় দেশি-বিদেশি দূর্লভ প্রজাতির নানা রঙের পাখির সমারহ।
এদিকে জাহাজমারায় রয়েছে সমুদ্র উপভোগের সুযোগ। ঢেউয়ের তালে সমুদ্র স্নানেও রয়েছে ভিন্ন আমেজ। এখানে গেলে দেখা মিলবে হাজারো জেলের। বিশেষ করে রাতের দৃশ্য আসলেই মনোমুগ্ধকর। উত্তাল সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলার ও সাম্পান নৌকার আলোগুলো দেখলে মনে হবে আকাশের শত শত তাঁরাগুলো নেমে এসছে নদীর পাড়ে। এ ছাড়াও এখানে গেলে মিলবে সাগর থেকে তুলে আনা টাটকা মাছের স্বাদও। তা ছাড়াও দূর থেকে সমুদ্র সৈকতের বিচে তাকালে লাল কাঁকড়া চোখে পড়বে। দেখলে মনে হবে যেন লাল চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
চরমোন্তাজের সোনারচর ও জাহাজমারা চর ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলায় চর তুফানিয়া, রুপার চর, চর হেয়ারসহ আরো বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় দ্বীপ রয়েছে। এসব দ্বীপে পর্যটকদের আগমন বাড়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। সেইসঙ্গে পর্যটকদের অবস্থানের জন্য হোটেল-মোটেল নির্মাণ করা জরুরি। এসব হলে রাঙ্গাবালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
স্থানীয়দের দাবি, জাহাজমারাকে যদি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয় তাহলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এগিয়ে যাবে এ অঞ্চল, এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল। সরকার যদি জাহাজমারাকে পর্যটন স্পট করার উদ্যোগ নেয় তাহলে এ এলাকায় প্রচুর মানুষের সমাগম হবে এবং দেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে।
জাহাজমারা ট্যুরিজমের ব্যবস্থপনা পরিচালক আজিজুর রহমান সুজন বলেন, এখন থেকে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা কুয়াকাটা থেকে ট্রলার বা স্পিডবোটে করে জাহাজমারা পর্যটনকেন্দ্র গুলোতে যেতে পারবে। দূষণ কোলাহল মুক্ত এ এলাকায় আসলে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আনোয়ার হোসেন জানান, বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে এত সুন্দর জায়গা না আসলে বিশ্বাস করা সম্ভব না। জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তবে এ জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। তাহলে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে।
পর্যটক মারজিয়া খাতুন বলেন, জাহাজমারা একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। এখানে প্রতিদিন কম-বেশি পর্যটক আসে। তবে শুক্রবার কয়েক হাজার পর্যটক আসে। সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করলে এখানে আরো বেশি পর্যটক আসবে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী জাহাজমারায় দৈনিক তিন থেকে ৪০০ এবং ছুটির দিনে দুই-তিন হাজার পর্যটক আসেন। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাজমারাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
এসআইএইচ