৫ বছরে দুর্নীতির পাহাড়, শেষ হয় না দুদকের তদন্ত!
২০১৭ সাল থেকে দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বরগুনার বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু। তার শাস্তি দাবি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পটুয়াখালীর নিজ কার্যালয়ে ২০২১ সালে এজাহার দায়ের করেছিল। কিন্তু গত এক বছরেও তদন্ত কার্যক্রমই শেষ করতে পারেননি তারা। আর এনিয়ে এখন স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তবে দুদকের দাবি খুব শীঘ্রই তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পারবেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটুর বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়। পরে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক স্মারকের চিঠিতে তাকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ (উপজেলা-১ শাখা)।
অপরদিকে তার বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করে ২০২১ সালের ১৬ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পটুয়াখালীর নিজ কার্যালয়ে এজাহার দায়ের করেন সহকারী পরিচালক নাজমুল হুসাইন। এর এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো তদন্ত কার্য শেষ করে চার্জশিট দাখিল কিংবা আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন কোনটাই জমা দিতে পারেনি দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পটুয়াখালী কার্যালয়ের ততকালীন সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হুসাইন এজাহারে উল্লেখ করেন, বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বিগত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে উপজেলার ৫০০ জন সাধারণ নাগরিকের নিকট হতে সরকারী নলকুপ প্রদানের কথা বলে নলকুপ প্রতি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৫০০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে অবৈধভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ৬২ লাখ ৫০ হাজার গ্রহণ করেছেন।
বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ০৩.০৮.০০.০১.০০২১৩.৪৮৩ স্মারকে রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, বামনা উপজেলার ৫০০ টি পরিবারে ৫০০টি নলকূপ বরাদ্দের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু প্রতি পরিবারের নিকট থেকে ঘুষ হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণপূর্বক একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন।
বামনা উপজেলা পরিষদের কাম সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর নাজমুল হুদার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের গোপনীয় সহকারী হিসেবেও কাজ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল হুদাকে দিয়ে নলকূপ দেয়ার কথা বলে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে গ্রহণ করেছেন এবং অবৈধভাবে নাজমুল হুদাকে দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি তালিকাও তৈরী করিয়েছেন।
বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুজ্জামান, রামনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আ. খালেক এবং ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দাদের নিকট থেকে নলকূপ দেয়ার কথা বলে সাইতুল ইসলাম লিটু ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। কিন্তু কাউকে নলকূপ দেননি। এভাবে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাদের নিকট থেকে মোট ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
এর আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ৪৬.০৪৬.০২৭.০০.০০.৪৪৪.২০১৪-৫৮৪ স্মারকের চিঠিতে বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটুর অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করে তাতে বলা হয়, বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটুর বিরুদ্ধে বিগত মেয়াদে চাঁদা/উৎকোচ গ্রহণ, ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির কাছ হতে কমিশন গ্রহণ, শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক-শিল্পীদের বেতন ভাতার টাকা, বাঁশ-বেত প্রকল্প, সেলাই মেশিন বিতরণ প্রকল্প, গরু-ছাগল বিতরণ প্রকল্পের টাকা, পানিকচু চাষাবাদের জন্য, কুকুর ও সাপে কামড়ানোর ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের একাধিক তদন্তে সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদটি শূণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম লিটু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি জীবনে দুইটাকাও ঘুষ খাই নাই। আরতো লাখ লাখ টাকার ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ। মূলত একটি জাতীয় দৈনিকের পেপার কাটিংয়ের সূত্র ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় এমপি এগুলো আমার বিরুদ্ধে করিয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল তখন তাদের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক দূরত্ব।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পটুয়াখালী উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম লিটুর ঘুষের অভিযোগের বিষয়ে গত মাসে নতুন একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, সাইতুল ইসলাম লিটু প্রথমবার ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ পঞ্চম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরগুনার বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ তিনি চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন।
এএজেড