চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতে ইউএনও’র তদন্ত নাটক
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন খাঁনকে ফাঁসাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত নাটক সাজিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে এ রিপোর্ট অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টির অধিকতর তদন্ত চেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন চেয়ারম্যান মামুন খান।
জানা গেছে,নিজের অপরাধ ধামাচাপা দেওয়া ও স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে মনগড়া তদন্ত রিপোর্ট দেন রাঙ্গাবালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান। তবে তার সঙ্গে চেয়ারম্যানের কোনও দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসন, রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র আরও জানায়, নিজ কার্যালয়ের কর্মচারীকে গুলি ও মারধর করা, হাট-বাজারের ইজারার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখা, চেক কেলেঙ্কারি ও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ না করে বরাদ্দ আত্মসাৎ করাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমানের রিরুদ্ধে। এসব বিষয় তদন্ত চলমান রয়েছে। এসব অভিযোগের রেষ না কাটতেই মনগড়া একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন তিনি। এতে নানা মহলে ব্যাপকভাবে সমালোচনার জন্ম দিলেন এই কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যান মামুন খাঁনকে হেনস্থা করতে ২০২০ সালে জেলা প্রশাসনে মৃত ১২ জন এবং ৫১ জনের নাম দুইবার অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তাদের বরাদ্দ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে একটি অভিযোগ দেন স্থানীয় কয়েকজন। পরে এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হেমায়েত উদ্দিন সরেজমিনে তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেন দাখিল করেন। তদন্ত রিপোর্টে তিনি এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং চেয়ারম্যানকে হেনস্থার জন্য করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
রাঙ্গাবালী উপজেলার একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার জানান, ইউএনও মাশফাকুর রহমান চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে পূঁজি করে নিস্পত্তি হওয়া অভিযোগটিকে পুনর্জীবিত করেছেন। এরপর তিনি চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট দাখিল করেন। গত ১ সেপ্টেম্বর ইউএনও’র দাখিল করা ওই রিপোর্টে চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করা হয়। অথচ তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইউএনও’র মতামতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হুমায়ুন কবির জানান, চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা তদন্ত চলমান আছে। রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান,কেউ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মৎস্য অফিসার আনোয়ার হোসেন বাবুল জানান, যে চাল নিয়ে অভিযোগ উঠেছে আসলে সেই চাল আত্মসাৎ হয়নি। এ বিষয়ে বেশী কিছু বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আর যদি অনিয়ম হয়েও থাকে ভিজিএফ সংশ্লিষ্টরা সবারই এর কম-বেশি দায়ভার আছে।
এদিকে ভিজিএফ সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা খসড়া ভিজিএফ তালিকা প্রণয়ন করে ইউএনও মনোনীত ট্যাগ অফিসারের কাছে জমা দিলে ট্যাগ অফিসার ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠায়। পরে ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা মৎস্য অফিসে পাঠায়। মৎস্য অফিস যাচাই করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করে তালিকা অনুমোদন করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দপ্তরে পাঠায়। পরে অনুমোদিত ভিজিএফ তালিকা উপজেলা খাদ্য অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ভিজিএফ তালিকা অনুযায়ী চেয়ারম্যান চাল বরাদ্দ পেলে লিখিতভাবে প্রতি ইউপি সদস্যদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ইউপি সদস্যরা ইউএনও মনোনীত ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ওই চাল বিতরণ করেন। যেখানে শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায় ভিত্তিহীন। ভিজিএফ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই এর দায়ভার নিতে হবে।
এসআইএইচ