বরগুনায় বিএনপির ৪০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, কারাগারে ৫

বরগুনা-২ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনির নিজ এলাকা পাথরঘাটায় ফেরাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে পাথরঘাটা থানায় মামলা হয়েছে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাধরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার।
তিনি জানান, রবিবার রাতে কাকচিড়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দীন পল্টু বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনিসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ২৫০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফায়েজুল মালেক সজিবসহ ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে কাড়াগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত বাকি ৪ জন হলেন- পাথরঘাটা পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব খায়রুল শরীফ, রায়হানপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. নয়ন, ছাত্রদল কর্মী হাসিব ও নয়ন।
এদিকে হামলার ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনা জেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য নুরুল ইসলাম মনির উপর পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ করে জেলা বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা বলেন, পাথরঘাটায় যা ঘটেছে তা একটি গণতান্ত্রিক দেশের নমুনা হতে পারে না। নুরুল ইসলাম মনি বরগুনা-২ আসনের তিনবারের সাবেক এমপি। সোমবার দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। কর্মসূচি যোগ দিতে তিনি নিজ এলাকায় আসতে গিয়ে হামলার শিকার হন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। তাই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নৈরাজ্য করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সদস্য সচিব তারিকুজ্জামান টিটু দাবি করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরার মেয়ে ফারজানা সবুর রুমকির নির্দেশে নুরুল ইসলাম মনির উপর আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত হামলা করেছে। এতে নুরুল ইসলাম মনি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরি মোহাম্মদ ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। রাতে আবারও হামলা চালিয়ে পাথরঘাটা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত রহমান অভিকে আহত ও কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম পহলানের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নদীতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ।
টিটু আরও বলেন, আমাদের জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ ৫ ছাত্রদল কর্মীকে মারধর করে আটক করেছে পুলিশ। আর সেখানে দুজন এমপি আছেন। তারা অতি আওয়ামী লীগার হওয়ার জন্য আমাদের কোনো প্রোগ্রাম করতে দেয় না।
এদিকে রবিবার রাতে পাথরঘাটা ও কাকচিড়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। সমাবেশ বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেন, নুরুল ইসলাম মনি একজন সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। তিনি এমপি থাকাকালীন কাকচিড়া নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে ডাকাতি করিয়ে মামলা দিয়ে এলাকার শতাধিক লোকজনকে হয়রানি করেছে। এ ছাড়া তার আমলে এলাকার অনেককে ভিটেমাটি ছাড়া করেছেন। তাকে কিছুতেই এলাকায় প্রবেশ ও রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে তেল-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সারা দেশে বিএনপি নেতাদের উপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির ডাকা সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা জানান, নুরুল ইসলাম মনির গাড়ি বহরে হামলা ও মামলার ঘটনায় আপাতত সোমবার বিকালে পাথরঘাটার সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।
এসজি
