ইচ্ছার বিরুদ্ধে 'কবুল' বললে কি বিয়ে হবে?
ছবি: সংগৃহীত
বিয়ে একটি সামজিক বন্ধর তৈরীর মাধ্যম, বিয়ের মাধ্যমেই একজন অবিবাহিত ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক তৈরী হয়। ইসলামে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক বর ও কনের অনুমতি নেওয়া জরুরি। বিয়ের আকদের সময় কনেপক্ষ থেকে ইজাব করা হলে বা প্রস্তাব দেওয়া হলে বরের ‘কবুল করলাম’ বলে তা গ্রহণ করা জরুরি। তবে বিয়ে করানোর জন্য অনেক অভিভাবক চাপ দিয়ে থাকেন, বিশেষ করে কনেকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এটি মোটেও উচিত নয়। কারণ অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করলে পরবর্তীতে তা অশান্তির কারণ হতে পারে। বিষয়টি অভিভাবকদের বুঝা উচিত।
তাছাড়া জোর করে বিয়ে দেওয়া একটি অনৈতিক কাজ। বিভিন্ন হাদিসে এসেছে, কুমারি মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। (মুয়াত্তা মালিক: ৮৮৮, সহিহ মুসলিম: ১৪২১, মুসনাদে আহমদ: ১৮৮৮, আবু দাউদ: ২০৯৮, তিরমিজি: ১১০৮, নাসায়ি: ৩২৬০, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪০৮৪)
আকদের সময় কনেপক্ষ থেকে ইজাব করা হলে বা প্রস্তাব দেওয়া হলে বরের ‘কবুল’ বলে তা গ্রহণ করা জরুরি। বরের ‘কবুল’ বলা ছাড়া বা ‘আলহামদুলিল্লাহ আমি গ্রহণ করলাম’ এ জাতীয় কথা ছাড়া যেমন বিয়ে হয় না, তেমনি মেয়ের সম্মতি ছাড়াও বিয়ে শুদ্ধ হয় না। কনের ক্ষেত্রে চুপ থাকাটাই সম্মতি বলে বিবেচিত হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন- لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ ‘কোনো বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারি মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেমন করে তার অনুমতি নেব। তিনি বললেন, তার চুপ করে থাকাটাই তার অনুমতি।’ (সহিহ বুখারি: ৪৭৬৪)
প্রাপ্তবয়স্ক কনে স্পষ্টভাবে নিজের অসম্মতির কথা জানিয়ে দেওয়ার পরও তার অভিভাবক যদি তা গোপন করে আকদ সম্পাদন করে, তাহলে ওই বিয়ে শুদ্ধ হবে না। সালামা বিনতে আব্দুর রহমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসুল (স.) তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভালো নয়। তখন রাসুল (স.) মেয়েটিকে বললেন, ‘এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও।’ (মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৫৯৫৩)
কিন্তু কনে যদি চাপে পড়ে বা বাবা মায়ের মন রক্ষার জন্য অন্তরে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মুখে সম্মতি দেয়, সেক্ষেত্রেও বিয়ে হয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ الطَّلَاقُ وَالنِّكَاحُ وَالرَّجْعَةُ ‘তিনটি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করুক বা ঠাট্টার ছলে করুক, তা ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়; সেগুলো হলো, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রাজঈর পর স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করা।’ (মেশকাত: ৩২৮৪)
অতএব, কেউ চাপে পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ের প্রস্তাবের উত্তরে ‘কবুল’ বললে ওই বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ৪/৮৭ বাদায়ে: ২/৬০২)