ইউক্রেন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়ে রাশিয়া তাদের সামরিক অভিযানে বড় সাফল্য অর্জন করছে। নতুন তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে রাশিয়ার দখলে নেওয়া ভূখণ্ডের পরিমাণ ২০২৩ সালের চেয়ে ছয় গুণ বেশি। বিশেষত, দনবাস অঞ্চলে রসদ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়ান বাহিনী।
ইন্সটিটিউট ফর দি স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রাশিয়া ২,৭০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। ২০২৩ সালে এ পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৬৫ বর্গকিলোমিটার। সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া আক্রমণের পর খারকিভের কুপিয়ানস্ক এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের কুরাখভসহ গুরুত্বপূর্ণ হাব পকরভস্ক এলাকাগুলোতে রাশিয়ার অবস্থান সুসংহত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান গতিতে রাশিয়ার অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্ট ধসে পড়তে পারে। লন্ডনের কিংস কলেজের প্রতিরক্ষা গবেষক ড. মারিনা মিরনের মতে, এই পরিস্থিতি ইউক্রেনের জন্য কৌশলগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
কুপিয়ানস্ক এবং ওসকিল নদীর পূর্ব অংশ ২০২২ সালে ইউক্রেন মুক্ত করলেও রাশিয়া পুনরায় তা দখল করে নিয়েছে। সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ান বাহিনী কুপিয়ানস্ক শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করছে। ভিডিও প্রমাণে দেখা গেছে, রাশিয়ান সেনারা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর চার কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে।
আইএসডব্লিউ জানিয়েছে, বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের মোট ১,১০,৬৪৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে এই অগ্রগতির জন্য রাশিয়াকে ব্যাপক মূল্য দিতে হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার অন্তত ৭৮,৩২৯ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের বিস্ময়কর অনুপ্রবেশ এখন দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাশিয়া ওই অঞ্চলে ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করে দ্রুত পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। অক্টোবরের শুরু থেকে রাশিয়া ৫৯৩ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন এই যুদ্ধে লোকবল সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার স্থায়ী অগ্রগতি এবং সামরিক শক্তি ইউক্রেনকে ক্রমেই চাপের মুখে ফেলছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণ চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে রাশিয়া কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই অগ্রগতি ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।